অস্তিত্ব সংকট কাটাতে কৌশলী সাদিকপন্থিরা
অনলাইন নিউজ ডেক্স
প্রচারে বারবার মেয়র সাদিকের ব্যর্থতা তুলে ধরছেন নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। তার অনুসারীরাও এটাই করছেন। শুধু সাদিকের বিরুদ্ধে বলা নয়, তাকে বরিশালে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছেন নৌকার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য।
নগরজুড়ে এখন দাপটও শুধু খোকন সমর্থকদের। এর বিপরীতে কোণঠাসা সাদিক অনুসারীরা। খোকনের কর্মী মনা আহম্মেদের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক রইজ মান্নাসহ সাদিক অনুসারী ১৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। অন্যরাও আছেন নানামুখী আতঙ্কে।
সবমিলে অস্তিত্ব সংকটে থাকা সাদিকপন্থিরা ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন নতুন কৌশলে। ভোটের মাঠে ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়ে জানান দিতে চাইছেন নিজেদের অবস্থান। বিষয়টি অবশ্য ভালো চোখে দেখছেন না খোকন অনুসারীরা। প্রার্থী দেওয়ার নামে প্রকারান্তরে তারা নৌকার ক্ষতি করবে কিনা এমনই শঙ্কা তাদের।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি খোকন সেরনিয়াবাত পক্ষের কেউ। বলা হচ্ছে আমরা নামলে নাকি নষ্ট হবে ভোট। প্রতিটি ওয়ার্ডেই গড়ে উঠছে তাদের আলাদা বলয়। মহানগর ও উপজেলা কমিটি বাতিলেরও দাবি উঠেছে। দাবি পূরণ হলে হয়তো বাতিল হবে ওয়ার্ড কমিটি। এসবই তো আমাদের অস্তিত্ব সংকটের নমুনা। মেয়র সাদিক বহুবার বলেছেন নৌকার পক্ষে কাজ করতে। কিন্তু কোন ভরসায় নামব সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এখনো তিনি (খোকন) মেয়র হননি। এরইমধ্যে কোণঠাসা হয়ে গেছি আমরা। চেষ্টা চলছে পদ-পদবি থেকে তাড়ানোর। তাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বুঝেশুনে এগোচ্ছি। মেয়র সাদিকের বাবা মন্ত্রী, ফুপু প্রধানমন্ত্রী। তার তো কিছু হবে না। মাঝে থেকে নগর ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাদের। এসব ভেবেই কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিচ্ছি। ভোটের মাঠে আপ্রাণ লড়ব। ভোটে জিততে পারলে অন্তত নগর ছেড়ে যেতে হবে না।’
সাদিকপন্থিদের এই বক্তব্যের প্রমাণ মেলে ভোটের মাঠের অবস্থা থেকে। সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ৪০ ওয়ার্ডেই মনোনয়ন দাখিল করেছেন সাদিকপন্থিরা। খোকন অনুসারীরাও প্রার্থী হয়েছেন এসব ওয়ার্ডে। ফলে আওয়ামী লীগের বিভক্তি শুধু মেয়রেই নয়, ছড়িয়ে পড়ছে ওয়ার্ডেও। শুরুতে সাদিকের পক্ষে থাকলেও পরে তার বিরুদ্ধে গিয়ে খোকনের দলে ভেড়া নগর পরিষদের ১০ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সাদিকের ১০ ঘনিষ্ঠ অনুসারী। তারা হলেন-২০ নম্বর ওয়ার্ডে জিয়াউল হক বিপ্লবের বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান মোল্লা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবীর, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে শফিকুল ইসলাম সুমন, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ আনিছুরের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিন মাহমুদ তারিক ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমির হোসেন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মেনন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জাকির হোসেন ভুলুর বিরুদ্ধে আনোয়ার হোসেন রয়েল, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৌহিদুল আলম বাদশার বিরুদ্ধে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সামসুদ্দোহা এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আনিছুর রহমান দুলালের বিরুদ্ধে আশ্রাফ খান। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহারের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ কেউ না থাকলেও প্রার্থী হওয়া সাবেক কাউন্সিলর নোমানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সাদিকের লোকজন।
২০১৮র সিটি নির্বাচনে বরিশালের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টিতে জয়ী হন সাদিক অনুসারীরা। ১০ জন পদত্যাগের পর বাকি ১৪ জনের বিরুদ্ধে আবার প্রার্থী হয়েছেন খোকন অনুসারীরা। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাদিক অনুসারী কেফায়েত হোসেনের বিপরীতে আছেন শেখ আনোয়ার হোসেন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মজিবর রহমানের বিপরীতে মারুফ আহমেদ, ১৯ নম্বরে গাজী নইমুল হোসেনের বিপরীতে জহিরুল সুনাম এবং ২১ নম্বরে শেখ সাঈদ আহমেদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন শাহরিয়ার সাচিব। এছাড়া নগরের অন্যান্য সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও পালটাপালটি প্রার্থী হয়েছেন দুপক্ষের নেতাকর্মীরা।
জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘প্রার্থিতার বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে চূড়ান্ত হতো আগে। কোনো ওয়ার্ডে যাতে একাধিক প্রার্থী না থাকে সেদিকে নজর থাকত। গতবারও একক প্রার্থী ও একই প্রতীকে নির্বাচন করেছেন নেতারা। কিন্তু এবার সবই এলোমেলো। কে যে কার কথা শুনবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট লস্কর নূরুল হক বলেন, ‘সাদিক অনুসারী এবং প্রতিমন্ত্রীপন্থিসহ দলের অনেকেই কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই নিয়ে কিছু বলতে গেলে জটিলতা বাড়বে। তাই আমরা কাউন্সিলর পদ উন্মুক্ত রেখেছি। আমরা মূলত নৌকার বিজয়ের দিকে ফোকাস দিচ্ছি। কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়ে দলের কেউ যদি নৌকার ক্ষতি করার চেষ্টা করেন তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাদিক অনুসারী হিসাবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশালের সিটি নির্বাচন তদারকি ও কৌশল নির্ধারণে টিম করেছে কেন্দ্র। টিমের প্রধান আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। কেন্দ্রীয় টিম যে পরামর্শ দেবে সে অনুযায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের টার্গেট নৌকার বিজয়। সেই লক্ষ্য অর্জনে যা কিছু করা দরকার তাই-ই করা হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।