তাহলে কি প্রেমের কারণেই বরখাস্ত হলেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী?


সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন কিন গ্যাং। অথচ তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অতি ঘনিষ্ঠ। তার ওপর ভরসা রেখে বিশ্বরাজনীতির উত্তাল সময়ে কূটনৈতিকভাবে চীনকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ এমনকি হলো, যার জন্য বরখাস্ত করা হলো শি জিনপিংয়ের এত ঘনিষ্ঠ কূটনীতিককে। এরই মধ্যে বিবাহবহির্ভূত প্রেমের সম্পর্কের এক গুজব শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে তা। এতে বলা হয়েছে, ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও টেলিভিশনের একজন উপস্থাপিকার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েছেন তিনি। ওই উপস্থাপিকাও সামাজিক মাধ্যমে ছিলেন সক্রিয়। কিন্তু কিছু দিন ধরে তিনিও লাপাত্তা। ফলে ঠিক এক মাসের মাথায় কিন গ্যাংকে বরখাস্ত করার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে বলে মনে করছেন নেটিজেনরা। খবর বিবিসি। ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কিন গ্যাংয়ের অপসারণ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে শোরগোল তৈরি হলেও, চীনে গতানুগতিক নীরবতার মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হলো তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি চীন সরকার। মঙ্গলবার সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তাকে বরখাস্তের খবর জানায়। দেড় বছর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বিশ্বে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন কিন গ্যাং। এক মাস আগে থেকে তাকে সরকারি কোনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে তার স্বাস্থ্যগত জটিলতার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কী সমস্যায় ভুগছেন তিনি, তার কিছুই জানানো হয়নি। তিনি এবং রাষ্ট্র, উভয়পক্ষই এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে। কয়েক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও যখন তাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না, তখন ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়। বলা হয়, রাজনৈতিক কোনো কারণে হয়তো তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে টেলিভিশন উপস্থাপিকার সাথে তার প্রেমের খবর প্রকাশ পায়। বলা হয়, এর জের ধরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চীনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন, এমন কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করেন- একই সময়ে এ দু’টি ঘটনার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে যে, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার বিরোধীপক্ষ নৈতিকতার কারণ দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। উপস্থাপিকার সঙ্গে যে সম্পর্ক তা চীনে বেআইনি নয়। কিন্তু একে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে দেখা হতে পারে। চীনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সময় তাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় চীনে। এর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন দেশের সর্বোচ্চ নেতা শি জিনপিং। এর পর থেকে বিশ্লেষকরা তার দিকে নজর রাখছিলেন যে, নতুন দায়িত্বে তিনি কতটা কঠোর বা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ হয়ে উঠতে পারেন। চীনের যেসব কূটনীতিক দেশটির সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন, তাদের পশ্চিমারা ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ বলে বর্ণনা করে থাকে। চীনের দিক থেকে মনোযোগ সরাতে যদি কাউকে গালি দেওয়ারও দরকার হয়, তাতেও তারা পিছপা হন না। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবে যখন তিনি কাজ করতেন, সেই সময় থেকে চীনের সমর্থনে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন কিন গ্যাং। সেই সঙ্গে তিনি নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, যিনি অন্যদের আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেন।