নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা হতো প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে


আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। বিএনপি নির্বাচনে না এসে বানচাল করতে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ শুরু করল। কারণ তারা জানত, জনগণের জন্য কাজ করে আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। এজন্যই তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করে। এই কাজে উৎসাহ জুগিয়েছিল তাদের কিছু প্রভু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় প্রার্থী ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, বলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়নি। তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে-কী কী ক্ষেত্র দেখে বলছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কিন্তু সেটা বলে না, শুধু বলে যাচ্ছে, নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ হয়নি। কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় হতে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন-কীভাবে কোথায় সমস্যা, তাদের বলতে হবে। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতা, দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য, সিটি ও পৌর মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় নির্বাচনের পর দলীয় নেতাদের মিলনমেলা হিসাবে বর্ণনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে তৃণমূল নেতাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা, আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে : প্র্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনো তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না আসেন, নির্বাচনটা যেন অবাধ না হয়, নির্বাচনটা যেন হতে না পারে বা নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে-এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল, নিষেধাজ্ঞা দেবে। তখন আমিও বলে দিয়েছি, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমারও দিতে পারি, আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছি। তিনি বলেন, এত কথার মধ্যে আমাদের দেশটা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ অন্তত প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। অনেকেই বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। এই কথাটা আমাদের সব নেতাকর্মীর মাথায় রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা এখন ভুলে যেতে হবে : নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সৃষ্ট দূরত্বের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন কষাকষি, নানারকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, এখন ভুলে যেতে হবে। সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনো আত্মঘাতী সংঘাত যেন না হয়। প্রভুদের নির্দেশে এখনো তারা কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে : জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই কাজে উৎসাহ জুগিয়েছিল তাদের কিছু প্রভু। তাদের নির্দেশমতো আন্দোলন করে। এখনো কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে। করতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের সংগঠন, এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কার গ্রহণযোগ্যতা কেমন, সেটাই দেখব : উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন, কারা করতে পারেননি সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে এর মধ্য দিয়ে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা কেমন, সেটাই দেখব। তিনি বলেন, কোনো রকম সংঘাত চাই না। (কোনো সংঘাত হলে) যিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, সে যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুতদারি বন্ধ করতে হবে : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্যের অবৈধ মজুত এবং চাঁদাবাজি রোধে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিবহণের ক্ষেত্রে অথবা পাইকারি মার্কেটে অথবা মজুতদারি; এইসব জায়গায় চাঁদাবাজি ও মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। এই মজুতদারি কেউ অহেতুক করতে পারবে না। পণ্য এলেই যেখানে-সেখানে পাইকারি মার্কেটে চাঁদাবাজি, চলার পথে চাঁদাবাজি, এগুলো বন্ধ করতে হবে। আপনারা এখানে বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আছেন। আপনাদের এসবে দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে, যে অর্থ আমরা ব্যয় করি তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন তাকে তত বেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নারীদের বিজ্ঞানে ক্যারিয়ার গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের একটি ন্যায়পরায়ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিজ্ঞান ক্ষেত্রে আরও বেশি অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই তরুণ নারীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার জন্য সঠিক নীতি ও প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান সমাবেশে নবম আন্তর্জাতিক নারী ও বালিকা দিবসে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞানে নারীদের নেতৃত্বের পদে উন্নীত করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের নারী বিজ্ঞানীদের কাজকে স্বীকৃতি ও প্রণোদনার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।