প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে বেতন পেয়েছি, সে অর্থই অনেক ছিল: মাহাথির
অনলাইন নিউজ ডেক্স
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ থাকলে তা আদালতে পেশ করুন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যে বেতন পেয়েছি, সে অর্থই আমার জন্য অনেক ছিল। পরে নির্বাচন করতে গিয়ে সেই অর্থও খরচ হয়ে গেছে।
তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন মাহাথির। দোহাভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানান তিনি।
মাহাথির বলেন, ‘আমি ওই অর্থ দেখিনি। কোথায় আছে, তা-ও জানি না। আমি জানতে আগ্রহী। যদি আমি অর্থ নিয়ে থাকি, আদালতকে বলুন, কিভাবে আপনি (আনোয়ার ইব্রাহিম) তা জানতে পেরেছেন।’
মাহাথির বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তিনি সুইজারল্যান্ড যেতে চান। ওই দেশের কোনো ব্যাংকের হিসাবে তিনি ‘তার আত্মসাৎ করা অর্থ গচ্ছিত রেখেছেন’ বলে অভিযোগ উঠেছে।
মাহাথির বলেন, ‘যদি আমরা এমন কোনো ব্যাংক খুঁজে পাই, তবে আমি সব অর্থ তুলে দেশবাসীকে দিয়ে দেব।’
আনোয়ার ইব্রাহিম তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় ৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার (১৫ কোটি রিঙ্গিত) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা করতে চলেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। আনোয়ার ইব্রাহিম অভিযোগ তুলেছিলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ও পরিবারকে সম্পদশালী করেছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি) বর্ষীয়ান এই নেতার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।
১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২৩ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। তারপর তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে অবসরে যান। অবসর থেকে ফিরে নিজ দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বিরোধী দলের হয়ে ২০১৮ সালে তিনি আবার নির্বাচন করে প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
মাহাথির মোট ২৫ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং এ সময় তিনি যে বেতন পেয়েছেন শুধু সেই অর্থই তার কাছে ছিল বলে দাবি করেন।
মাহাথির বলেন, ১৯৮১ সালে তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার বেতন ছিল ১ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার (৮ হাজার রিঙ্গিত) এবং ক্ষমতা ছাড়ার সময় ছিল ৪ হাজার ২৪০ ডলার (২০ হাজার রিঙ্গিত)।
মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার পর সরকার থেকে তাকে পুত্রাজায়ায় বিনামূল্যে পাঁচ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ১০ লাখ রিঙ্গিতে (২ লাখ ১২ হাজার ডলার) সেই জমি কিনে নিয়েছেন। সরকারি রেকর্ড আছে, আমি কখনো সরকার থেকে ফ্রি একটি পয়সাও নিইনি।
১৯৯০-এর দশকে প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আনোয়ার। মাহাথিরের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আইনি জটিলতায় জড়ান না। মাহাথিরের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তে তিনি কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করছেন না।
গত জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি) মিরজান ও মখজানিকে প্যান্ডোরা ও পানামা পেপারস ফাঁসের পর তাদের সম্পদের হিসাব দেখাতে বলেছিল। এর তিন মাস পর এপ্রিলে এমএসিসি জানায়, তারা মাহাথিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করছে।
মাহাথির দাবি করেন, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে তার ছেলেদের ব্যবসা করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি চাইনি আমার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠুক। আমি ক্ষমতা ছাড়ার পর মখজানি তার ব্যবসায় সফল হয়েছে।
২০১৮ সালে মাহাথির যখন আবার নির্বাচনে প্রার্থী হন, তখন তিনি হলফনামায় তার ৬৯ লাখ ডলার (৩ কোটি সাড়ে ২৩ লাখ রিঙ্গিত) সমমূল্যের সম্পদ থাকার তথ্য দিয়েছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচন করতে গিয়ে বেশির ভাগ অর্থও তিনি খরচ করে ফেলেছেন বলে জানান।
দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মালয়েশিয়ার আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে কারাগার থেকে বেরিয়ে বাড়িতে সাজা খাটার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি পছন্দ হয়নি মাহাথিরের।
মাহাথির বলেন, বাড়িতে থাকার অর্থই আপনি মুক্ত। বাড়ির বাইরে আসতে পারছেন না, কিন্তু বাড়িতে তো মুক্ত। আপনি কোটি কোটি অর্থ চুরি করবেন এবং আপনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হবে- এটা ভবিষ্যৎ নেতাদের জন্য খুব খারাপ উদাহরণ।
সূত্র: আল-জাজিরা।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।