বাজেটে গুরুত্ব কমেছে স্বাস্থ্য খাতের


প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। মোট বরাদ্দের মাত্র ৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দ ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ১ শতাংশেরও কম। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে এমনকি প্রতিবেশী দেশেও এ খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। দুই বছর আগে করোনাকালে সেটি স্পস্ট হয়েছে। তারা বলছেন, এবার নামকাওয়াস্তে কয়েকটি ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে কর মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও ওষুধের দামের বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। তাদের মতে, সর্বজনীন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। জানতে চাইলে বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, এবার স্বাস্থ্য বাজেটকে পরিমাণের দিক থেকে বৃদ্ধি বলা হচ্ছে। কিন্তু আপেক্ষিকভাবে দেখলে বোঝা যায় বেশ কয়েক বছর ধরে মোট বাজেটের ৫ শতাংশের আশপাশে বরাদ্দ থাকত। এবার তা কমে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সেদিক থেকে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমেছে। বাজেটের আপেক্ষিক বৃদ্ধির পরিমাণটাকে ওইভাবে না চিন্তা করে শতাংশে ধরলে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তিনি বলেন, কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যে যে বাজেট দেওয়া হয় তা খরচ করতে পারে না। প্রতি বছরই কিছু ফেরত যায়। সে কারণে এবার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন খরচ করতে পারছে না, সেটি আগে খতিয়ে দেখা দরকার। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি দেশের মোট বাজেটের ১২ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছে। বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও ১১ দশমিক ১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সেখানে বৃদ্ধির পরিবর্তে শতাংশের দিক থেকে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রমাণ হচ্ছে স্বাস্থ্যে নজর কমে গেছে। জানা গেছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে এবার মোট বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ৩ শতাংশ। কিন্তু মোট বাজেটের বিবেচনায় বরাদ্দ কমেছে। এবার বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এর ৫ শতাংশ। আগের বছর যা ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, ২০২৪ সালে মোট উন্নয়ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের অংশ ৪১ শতাংশ। আগের বছর যা ছিল ৫১ শতাংশ। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে এবার বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৭৬ শতাংশ। সিপিডি মনে করে স্বাস্থ্য খাতে এই বরাদ্দ একেবারেই যৌক্তিক নয়। কারণ বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ হওয়া উচিত। চার রোগের ওষুধের কাঁচামালের কর মওকুফের প্রস্তাবে কিছুটা স্বস্তি : বাজেটে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া এই চারটি রোগের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে কর মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা সুলভ করতে দেশে প্রস্তুত হয় এমন নিরাময়যোগ্য ওষুধের ১০০টি কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য রোগের ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই প্রস্তাবনা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নারী ও শিশু সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে ও উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর (আগাম কর) ও সম্পূরক শুল্ক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অব্যাহতি সুবিধা মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ২৯ হাজার ৮৯০ জনকে বিশেষ সম্মানি ভাতা দেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ ১৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীর ২৪৫ পরিবার পেয়েছে স্বাস্থ্য বিমা ও জীবন বিমা, যার পরিমাণ ৭৫০ কোটি টাকা।