বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয় : কাদের সিদ্দিকী


কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (বীর উত্তম) কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আওয়ামী লীগের দল করলে আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করার জন্যে আর কোন দলের দরকার নাই, আওয়ামী লীই যথেষ্ট। বিএনপিও এ থেকে বেশি দূরে নাই। সম্প্রতি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত হেরে গেছেন। কেউ কি আগের দিন পর্যন্ত জানতেন আজমত হারবেন? আজমতকে হারানো দরকার ছিল তাই আওয়ামী লীগের লোকেরাই জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষের লোকের চেয়ে অনেক বেশি কান্নাকাটি করেছে। হয়তো তাই আল্লাহও কবুল করেছন। কিন্তু পরে অবস্থাটা কি হবে। আগামী পাঁচ বছর এ সিটি চালাতে গিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নানা রকমের অসুবিধা হবে। কারণ একটা পদে তো দুইটা মানুষ বসতে পারে না। একটা পদের জন্য একটাই নেতা থাকেন, একজনই কর্তা থাকেন। কিন্তু গাজীপুরে জাহাঙ্গীর এবং তার মা সমান সমান কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন চালাবেন। আপনার এর ফল এক বছরের মধ্যেই দেখতে পাবেন। শুক্রবার গাজীপুর শহরে বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গাজীপুর জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওইসব কথা বলেন। এরআগে সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক। সম্মেলন শুরুর আগে অডিটরিয়ামের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বীর প্রতীক, কেন্দ্রীয় সদস্য ফেরদৌস আলম, কেন্দ্রীয় যুব আন্দোলনের নেতা হাবিবুন নবী হোসেল, সিপিবি’ গাজীপুর জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন, ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মো. কাউসারুজ্জামান, যুব আন্দোলনের গাজীপুর শাখার নেতা মিঠুন সিদ্দিকী, কালিয়াকৈর উপজেলা কমিটির সভাপতি আলী হোসেন মন্ডল প্রমূখ। কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, আমরা খুব একটা ভাল অবস্থার মধ্যে নেই। আজ ক’দিন যাবৎ দেশে আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে নানা কথা চলছে। বিএনপি বলছে এটা সরকারকে চাপে ফেলার জন্য আমেরিকা ভিসার রেসট্রিকশনটা দিয়েছে, যে নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করবে আমেরিকা তাকে ভিসা দেবে না। বিএনপি বলছে এটা আওয়ামী লীগের ক্ষতি, আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপিকে সোজা করার জন্য আমেরিকা ভিসা রেসট্রিকশন দিয়েছে। কেউ একবারও ভাবে না , এটা আওয়ামী লীগ বিএনপির ক্ষতি নয়, ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের, ক্ষতি হচ্ছে বাঙ্গালীর, ক্ষতি হচ্ছে আমাদের জাতির। এতে আমাদের সম্মান নষ্ট হচ্ছে এটা কেউ চিন্তা করে না। আমাদের জাতীয়ভাবে চিন্তা করতে হবে। সবদেশেই যাকে পছন্দ নয় তাকে ভিসা দেয় না। এটা নতুন কি হলো। তবে আমেরিকা যদি কারো বন্ধু হয়, তাহলে তার আর কোন শত্রুর দরকার নেই। ওই আমেরিকা বন্ধুত্ব করেই সবশেষ করে দেয়। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। কিন্তু আজকে সেই মানুষের কোন অধিকার নেই। ২২ পরিবারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে আমরা সংগ্রাম করে ২২ হাজার অথবা ২২ লাখ ধনী মানুষের হাতে দেশটাকে দিয়ে দিয়েছি। এর কোন প্রতিকার নেই। কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে সাড়ে তিন বছরে আমাকে সাতবার মন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান কতবার আমাকে মন্ত্রী বানাতে চেয়েছিলেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তার ডবলবার চেষ্টা করেছেন। খালেদা জিয়া ২০০৫ বলেন, দেখেন আমি প্রধানমন্ত্রী ছিলাম এখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী কি কি করতে পারে তা আমি জানি। আপনি আমাদের সঙ্গে এলে আমাদের আর কোন চিন্তা থাকে না। তারা প্রথমে আমাকে নির্বাচনে ২০টা সিট দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পরে তিনি ২৫ সিটে গিয়ে ঠেকেছিলে, আপনাার আরো যদি লাগে আপনি নেন, কিন্তু আপনি আমাদের সাথে থাকেন। কিন্তু আমি যাইনি। তখন আমার মনে হয়েছিল যে আমরা কারো সঙ্গে না গেলেও নির্বাচনে চারটা সিট পেয়ে যাবো। সেখানে একটা সিট পেয়েছিলাম। তারপরও আমি রাজাকারের দোসরদের সঙ্গে যাইনি। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের জোটের সঙ্গে গিয়েছিলাম। আমি ড. কামাল হোসেনকে নেতা বলে মানতাম। ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুকে যথেষ্ট পরিমাণ মান্য করেন। আমার মনে হয়েছিল তিনি আমার চেয়েও বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। আমি সেজন্য তার নেতৃত্বে ঐক্যজোটে গিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার মাস খানেক পরে আমার মনে হয়েছে যে কামাল হোসেন নেতৃত্ব করেন না,ওনি শুধু সময় কাটান। ওনি অত্যন্ত বড় মানুষ, মেধাবী মানুষ, পৃথিবীর বিখ্যাত আইনজ্ঞ। কিন্তু ওনি নেতা নন, গরীব মানুষের নেতা নন। সেজন্য আমি সবার পরে ঐক্যজোটে গিয়েছিলাম সবার আগেও ঐক্যজোট ছেড়েছিলাম। আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ ভুল হলো ড. কামাল হোসেনের নেত্বত্বে জোট গঠণ করা এবং জোটে যাওয়া। এটা আমার জীবনের সেরা ভুল। আমি এ ভুল থেকে এটা শিক্ষা নিয়েছি যে, বিএনপিকে আরও ১০০ বছরে যতটা না চিনতে পারতাম, জোটে গিয়ে মাস তিনেকেই ততটা চিনতে পেরেছি। বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপি হচ্ছে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের দল। যদিও এখন বিএনপিতে খালেদা জিয়ার তেমন অবস্থা নেই। এখন সম্পূর্ণই হচ্ছে তারেক রহমানের দল। কাদের সিদ্দিকী বলেন, সংগঠণ ছাড়া সংগ্রাম করার আর কোন বিকল্প হাতিয়ার নেই। সংগঠণ হচ্ছে সবার আগে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক বড় নেতা ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। কিন্তু তার কোন সংগঠণ ছিল না বলে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। স্বাধীনতা এদেশের এনে দিতে পারেন নি। সংগঠন একটা মস্তবড় জিনিস। তাই তিনি তার দলীয় নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠণকে শক্তিশালী করতে তাগাদা দেন।