বিশ্ব এইডস দিবস আজ আক্রান্তরাও জন্ম দিচ্ছেন সুস্থ সন্তান


এইডস সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে আজ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস-২০২৩। এবারের প্রতিপাদ্য-লেটস কমিউনিটিস লিড অর্থাৎ কমিউনিটির আমন্ত্রণ, এইডস হবে নিয়ন্ত্রণ। দিবসটি উপলক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি, কেয়ার বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বেসরকারি সংস্থাগুলো সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এছাড়া ১০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদোগে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলতি বছরের এইডস পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচিসংশ্লিষ্টরা জানান, দুরারোগ্য ব্যাধি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ সন্তান জন্ম দিচ্ছেন এইডস রোগীরা। দেশে ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত নারী ও পুরুষ ২৭০ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। যার মধ্যে ২৫৯ নবজাতক এইচআইভি-মুক্ত ছিল। এইডস চিকিৎসায় দেশের ২৩ জেলায় ২৩টি এইচআইভি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার আছে ১৩টিতে। এসব সেন্টারে আসা রোগীরা এ সফলতা পেয়েছেন। সুস্থ সন্তান জন্মদানে সফলতার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। এতে রোগটি প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি দ্রুত রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, এইডস আক্রান্ত কোনো পুরুষ বা নারী চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সঠিক নিয়মে ওষুধ খেলে একটা সময় তার রক্তে এইচআইভি ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে না। এতে আক্রান্ত স্বামীর শুক্রাণুতে সেই পরিমাণ ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে না। একইভাবে এইডস আক্রান্ত নারী থেকে গর্ভের সন্তানের শরীরে যতটুকু পরিমাণ ভাইরাস যাওয়ার কথা, সেটির অস্তিত্ব থাকে না। তখন গর্ভস্থ শিশু এইডস ছাড়াই জন্ম নিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পজিটিভ ব্যক্তির রক্তে এইচআইভির ভাইরাল লোড তথা ভাইরাসের মাত্রা অবশ্যই প্রতি মিলিলিটারে ৫০ কপির (সংখ্যা) নিচে থাকতে হবে। এইচআইভি রোগীর শরীরে ভাইরাল লোড এক হাজারের ওপরে থাকলে পরিস্থিতি খারাপ ধরা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রতিবছর যেসংখ্যক নতুন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তার ৫০ শতাংশই প্রবাসী। এর মধ্যে গর্ভবতী নারী রয়েছেন শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এইডস পজিটিভ গর্ভবতীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৩ সাল থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ‘প্রেগনেন্ট মাদার টু চাইল্ড ট্রান্সমিশন প্রোগ্রাম (পিএমটিসিটি)’ কার্যক্রম চালু করে। বর্তমানে ইউনিসেফের কর্মসূচি বন্ধ থাকলেও সরকারিভাবে পরিচালিত কেন্দ্রে রোগীরা এ সেবা নিতে পারছেন। এসব কেন্দ্রের মধ্যে বিএসএমএমইউ, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যশোর জেলা সদর হাসপাতাল এবং কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালসহ উখিয়া, চকোরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালী উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে এ কার্যক্রম আছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল। এ সময়ের মধ্যে রোগটির প্রতিরোধ সম্পর্কে ৯৫ ভাগ মানুষকে সচেতন করতে হবে। শনাক্ত হওয়া ৯৫ শতাংশ রোগীকে এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। ৯৫ ভাগ এআরটি সেবাগ্রহীতা রোগীর দেহে ভাইরাল লোড ৫০ কপি প্রতি মিলিলিটারের নিচে আনতে হবে। এ তিনটি অর্জন সম্ভব হলে রোগটির নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির সিনিয়র ম্যানেজার মো. আখতারুজ্জামানের মতে, এ স্বল্পসংখ্যক পরীক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্রের মাধ্যমে মা থেকে শিশুর এইডস সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালে এ সেবা চালু করতে হবে। এসব কেন্দ্রে মা থেকে সন্তানকে এইডসমুক্ত রাখতে গর্ভধারণের আগে এইচআইভি পরীক্ষা করতে হবে। সুস্থ সন্তান জন্মদানে নিরাপদ ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে জোর দিতে হবে। দেশে বর্তমানে অনুমিত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬০০। তবে ১৯৮৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এইডস শনাক্ত হওয়া চিহ্নিত রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৭০৮ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৮২০ জন। বর্তমানে রোগটি প্রাদুর্ভাবের হার শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশের কম। জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের ম্যানেজার (ডেটা ও আইটি) আলাউদ্দীন চৌধুরী বলেন, দেশে সরকারিভাবে পরিচালিত পরীক্ষাকেন্দ্র ও এআরটি সেন্টার ছাড়াও ৯টি কারাগারে এইডস শনাক্ত ও পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ), গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-১ ও ২, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লা ও যশোর জেলখানা। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে পরিচালিত ১১৫টি ড্রপ ইন সেন্টার রয়েছে। যেখানে সন্দেহভাজনদের বিনামূল্যে এইডস শনাক্তকরণ, চিকিৎসা প্রদান, ওষুধ ও ভাইরাস প্রতিরোধী উপকরণ সরবরাহ করা হয়। গত বছরের শেষের দিকে আরও ৯টি জেলায় এইচআইভি প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিয়মিত কাউন্সেলিং, পরীক্ষা, চিকিৎসা, ওষুধ ও উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।