রমজানেও যার পাপ মোচন হলো না তার জন্য আফসোস


মাগফিরাতের দশকের একেবারে শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছি আমরা। নিশ্চয়ই দয়াল মাওলার অফুরান ক্ষমা ও করুণায় অগণিত আদমসন্তান ইতোমধ্যে পুরস্কৃত হয়েছেন। হে আল্লাহ! রহমত ও মাগফিরাতের পবিত্র দিনগুলোতে তুমি যাদের কবুল করেছ, অনাগত নাজাতের দিনে যাদের মুক্তি দেবে, তাদের তালিকায় আমাদের নামটিও অন্তর্ভুক্ত করে নাও। ওগো দয়ালু আল্লাহ! আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো না যাদের ব্যাপারে তুমি বলেছ-‘ওই ব্যক্তির চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে, যে রমজান পেল অথচ তার গোনাহ মাফ করাতে পারল না।’ এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবি (সা.)-এর এ হাদিসটি বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য-নবিজি একদিন মসজিদে নববির মিম্বরে আরোহণ করছিলেন। মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে তিনি বললেন, আমিন! মিম্বরের দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি আবার বললেন, আমিন! মিম্বরের তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখে তিনি তৃতীয়বারের মতো বললেন, আমিন! যার অর্থ-হে আল্লাহ তুমি কবুল করো! নবিজির জীবনে এই প্রথমবার এমন ঘটনা দেখে সাহাবায়ে কেরাম খুতবার পর এ বিষয়ে জানতে চাইলেন। তখন তিনি বলেন, ‘এইমাত্র হজরত জিবরাইল (আ.) এসে আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি আমাকে বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে রমজান মাস পেল অথচ তার পাপ মোচন হলো না। আমি বললাম, আমিন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সে আপনার ওপর দরুদ পড়েনি। আমি বললাম, আমিন। আমি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখতেই তিনি বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে পেল, অথবা উভয়ের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, অথচ সে জান্নাত লাভ করতে পারল না। আমি বললাম, আমিন!’ এ হাদিসে তিন ব্যক্তির প্রতি রাসূল (সা.) এবং হজরত জিবরাইল (আ.) বদদোয়া করেছেন। সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইল এবং নবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবি দয়ার সাগর হজরত মুহাম্মদ (সা.) যার জন্য বদদোয়া করেছেন তারচেয়ে বড় অভাগা ও কপাল পোড়া আর কে আছে! ওলামায়ে কেরাম বলেন, রমজান মুমিন বান্দার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝাতেই রাসূল (সা.) ও জিবরাইল (আ.) উম্মতের প্রতি এ কঠোর ও কঠিন সর্তকবাণী উচ্চারণ করেছেন। নবিজির প্রতি দরুদ পাঠ কত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় ইবাদত তা বোঝার জন্য এ হাদিসটিই যথেষ্ট। মা-বাবার সেবা-যত্ন ও তাদের অধিকার পূর্ণমাত্রায় যে প্রদান করবে না, তার ভয়াবহ পরিণামের সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে এ হাদিসে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধাবস্থায় থাকে, তাহলে তাদের ‘উহ্?’ পর্যন্তও বলো না এবং তাদের ধমকের সুরে জবাব দিও না বরং তাদের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কথা বল। আর দয়া ও কোমলতাসহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাক এবং দোয়া করতে থাক এই বলে, হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতাসহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)। জিবরাইল (আ.)-এর দোয়া ও রাসূল (সা.) আমিন (কবুল কর আল্লাহ) বলে রমজানের গুরুত্ব বোঝানোর সঙ্গেই দরুদ শরিফ পাঠ ও মা-বাবার অধিকারের গুরুত্ব বর্ণনার কারণ হিসাবে অনেক ইসলামিক স্কলার এ কথা বলে থাকেন যে, সিয়াম সাধনার এ সময়ে অধিক দরুদ পড়ার অভ্যাস ও মা-বাবার অধিকার প্রদানের বিষয়টি অতিসহজে রপ্ত করা যায়। এজন্য সিয়ামের আলোচনার সঙ্গেই এ দুটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, রমজানের প্রতিদান যেমন অকল্পনীয়, তেমনি দরুদ ও মা-বাবার অধিকার প্রদানের পুরস্কারও অকল্পনীয় হওয়ায় একসঙ্গে তিনটি দোয়া করেছেন জিবরাইল (আ.)। সিয়াম আদায়কারীর উচিত নবি ও ফেরেশতার বদদোয়া এবং আল্লাহর ভয়াবহ আজাব ও গজব থেকে বেঁচে চির সুখের জান্নাত লাভের জন্য পবিত্র এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা। যাতে এ মাসের অনুশীলন থেকে বাকি ১১ মাস আমরা জীবন ও সমাজে সামগ্রিকভাবে সৎ ও কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারি। লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ, আলমনগর, সাভার, ঢাকা।