রিজভীর সামনেই দুগ্রুপে সংঘর্ষে আহত ১৫


নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সামনেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিবদমান দুগ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় দুগ্রুপের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে আড়াইহাজার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিক ও নারায়ণগঞ্জ যুবদল নেতা রতন, মাহফুজ, নাজমুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় কর্মীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যা হাসপাতাল রোডের সামনে পদযাত্রায় অংশ নিতে রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদসহ নেতারা সভাস্থলে পৌঁছান। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে প্রথমে ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ ও ছাত্রদল নেতা সাহেদ আহমেদের সমর্থকরা বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এই দুই নেতা মূলত জেলা বিএনপির ২ শীর্ষ নেতার অনুসারী হিসাবে পরিচিত। একপর্যায়ে তাদের তর্ক-বিতর্ক হাতাহাতিতে রূপ নেয়। একই সময় পদযাত্রার আগে রিজভীর পাশে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সুমনের লোকজনদের মধ্যেও বাগবিতণ্ডা হয়। তখন সুমনের পক্ষে যুবদলের জেলার সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির লোকজন মিলে আজাদের লোকজনদের ওপর চড়াও হন। বিপরীতে আজাদের পক্ষে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও যুবদল নেতা রফিকুল ইসলামের লোকজন পালটা শাসাতে গেলে শুরু হয় ফের মারামারি। এ সময় রুহুল কবীর রিজভী মাইক হাতে নিয়ে মারামারি থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ মহানগরের পদধারী নেতারাও শত চেষ্টা করেও তাদের নিবৃত করতে পারেননি। এদিকে পদযাত্রা শেষে আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সুমনের লোকজন মিছিল নিয়ে চাষাঢ়ার দিকে যাওয়ার সময়ে তাদের উদ্দেশ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আজাদের অনুগামী রফিকুল ইসলাম। ওই সময়ে সুমনের পক্ষ নিয়ে যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনির অনুগামীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। শুরু হয় ধাওয়া-পালটাধাওয়া। তখন রফিককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়। রক্তাক্ত হন আরও কয়েকজন। একপর্যায়ে আজাদ অনুসারী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব ও তার লোকজন পালটা হামলা চালালে দুপক্ষের সংঘর্ষে নগরীর মিশনপাড়া মোড় কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটাধাওয়াতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। তাদের শহরের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি গণমাধ্যমের কাছে সংঘর্ষে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলের সিনিয়র নেতাদের সামনেই যা হবার হয়েছে। পরে আর আমি সেখানে ছিলাম না। তবে শুনেছি অনুষ্ঠান শেষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে রফিক, রতন ও মাহফুজসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব ভাই একই সঙ্গে দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু তিনি ও তার অনুসারীরা আজকে এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন কেন তা জানি না। রাজনীতি করি তাই প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে মারামারি বা সংঘর্ষের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া দলের জন্য শুভকর নয়। তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবের মোবাইলে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা জানান, ঘটনার পর খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা চলে গেছেন। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।