পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে নুরসহ আহত ৩০
অনলাইন নিউজ ডেক্স
নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তালা লাগিয়ে দিয়েছে ভবনের মালিক পক্ষ। বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের প্রীতম-জামান টাওয়ারের ছয়তলায় তালাবদ্ধ কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের প্রবেশের চেষ্টার সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান বলেন, বিকালে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। পুলিশের লাঠিচার্জে সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অন্তত ৩০-৪০ নেতাকর্মী আহত হন। নুরকে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, পুলিশ কারও ওপর হামলা বা লাঠিচার্জ করেনি। উভয় পক্ষের মধ্যে যাতে সংঘর্ষ না হয়, সেজন্য শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দুপুর ১২টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের অফিস স্টাফ ও উপস্থিত নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়। এ সময় কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, মনোনয়ন বিক্রির টাকাসহ সব ডকুমেন্ট নিয়ে এতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসের সামনে ২০-২৫ জন মস্তানকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা প্রবেশের চেষ্টা করছে তাদের মারধর করা হচ্ছে। এর আগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে মিটার নিয়ে গেছে। এভাবে একের পর এক অমানবিক আচরণ ও অত্যাচার করে যাচ্ছে ভবনের মালিক মিয়া মশিউজ্জামান। এরপর বিকাল ৬টার দিকে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে কার্যালয়ের সামনে ফেসবুকে লাইভ করেন নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, বাড়ি ভাড়ার চুক্তি অনুযায়ী আমাদের ছয় মাসের সময় দিতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি, দখলদারের পক্ষে না থেকে চুক্তি অনুযায়ী আমাদের কার্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিন। আমাদের কার্যালয়ে ঢুকতে দিন।
এক ঘণ্টা তিন মিনিটের লাইভে দেখা যায়, পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন নুর ও তার অনুসারীরা। এ সময় তারা স্লোগান দেন ‘আমাদের কার্যালয় ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে। ভিপি নুরের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।’ ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে নুরের পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি ছিঁড়ে যায়। পুলিশকে কার্যালয় থেকে সরে যেতে বলেন নুরের অনুসারীরা। এ সময় এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, এখানে মারামারি হচ্ছে না, ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। ২৯ মিনিট পর নুর ও তার অনুসারীদের নেমে আসতে দেখা যায়।
এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগানোর পর প্রীতম-জামান টাওয়ারের কাছে সংবাদ সম্মেলন করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে তালা দেন প্রীতম-জামান টাওয়ারের মালিক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান। তিনি রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক। দলে ভাঙনের পর রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদে আগের দুটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন মশিউজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘মিয়া মশিউজ্জামান আমাদের দলে থাকার সময় এই কার্যালয় অনুদান হিসাবে দিয়েছিলেন। তিনি এখন দল করবেন না, ভালো। তাহলে চুক্তি অনুযায়ী তিনি মাসিক ভাড়া নেবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রীতম-জামান টাওয়ারের মালিক মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, গণঅধিকার পরিষদের অফিস ছাড়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। ১৭ মাসের ভাড়া বাকি থাকার কারণে তাদের অফিস ছেড়ে দিতে বলা হয়, তারা সেটা শোনেননি। এজন্য প্রথমে তাদের বিদ্যুৎ লাইন কাটা হয় এবং মৌখিকভাবে আবারও অফিস ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। তখন তাদের পক্ষ থেকে ফেসবুক লাইভে ও পাবলিক মিটিংয়ে আমার ওপর নানা রকম বিষোদগার করা হয়। বিল্ডিংয়ের মালিকানা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে নুরুল হক নুর ঘোষণা দেন, এটা তার দখলে রাখবেন। জমির মালিকানার দলিল হাজির করতে না পারলে তিনি অফিস ছাড়বেন না। আমার পৈতৃক সম্পত্তি যখন থ্রেটের মুখে পড়েছে, তখন দরজায় তালা লাগিয়েছি। এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এখানে গণঅধিকার পরিষদের অন্য অংশ কিংবা বাইরের কোনো লোককে এ কাজে ব্যবহার করিনি। এত বড় বিল্ডিংয়ে আমার অনেক মিস্ত্রি রয়েছে, তারা শুধু একটা কলাপসিবল গেট বানিয়ে তাদের কাঠের দরজার ওপরে লাগিয়ে রুমটা সিল করে দিয়েছে। ভেতরে কেউ ঢোকেনি। কোনো জিনিস লুটপাট হয়নি, যা কিছু ভেতর আছে শান্তিপূর্ণভাবে সেগুলো যদি নিয়ে যেতে চান, ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করব। কিন্তু রুমের দখল বুঝিয়ে দিতে পারব না।
এর আগে গত ৭ জুলাই দুদিনের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়তে নোটিশ দিয়েছিল ভবনের মালিক পক্ষ। গণঅধিকার পরিষদের তৎকালীন সদস্য সচিব নুরুল হক বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়। মালিকের পক্ষে মো. রাশিদুল আজিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি নোটিশটি পাঠিয়েছিলেন।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।