অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন


নিমতলী ও চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর আমরা আশা করেছিলাম, সারা দেশের আবাসিক এলাকাগুলো থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু দুঃখজনক, এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। ফলে আবাসিক এলাকার অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউনে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের গদারবাগে আবাসিক এলাকায় থাকা অবৈধ রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে কয়েকজন মারা গেছেন। জানা যায়, যে গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেটি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা এলাকার এক রাসায়নিক ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কেরানীগঞ্জ স্টেশনের ওয়্যারহাউজ পরিদর্শক বলেছেন, ঘটনাস্থলে জুতার ও কলমের কালিজাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে; অবৈধভাবেই ওই ব্যক্তি সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুত করে রেখেছিলেন। একের পর এক ট্র্যাজেডির পরও কর্তৃপক্ষের কেন টনক নড়ছে না, সেটাই প্রশ্ন। আবাসিক এলাকায় থাকা অবৈধ রাসায়নিকের গুদামগুলো চিহ্নিত করা এবং সরানোর ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা রাখার কথা, তারা কী করছেন? আবাসিক এলাকায় বারবার এমন দুর্ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একের পর এক দুর্ঘটনা ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরও আবাসিক এলাকাকে ঝুঁকিমুক্ত করার বিষয়ে কেন কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যাদের অবহেলার কারণে মানুষকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। অবৈধ কারখানা ও গোডাউনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত না থাকলে নিমতলী ও চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকেই যায়। সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির পর রাসায়নিক পণ্য মজুত, সংরক্ষণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। কেমিক্যাল মজুত, সংরক্ষণ ও সরবরাহের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা তা মেনে চলছে কি না, তাও নিয়মিত যাচাই করতে হবে। দেশে অগ্নিনির্বাপণে সাধারণত পানি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি আমাদের মনে করিয়ে দেয় কোনো অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে কেমিক্যালের সংশ্লিষ্টতা থাকলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে অগ্নিনির্বাপণে সাফল্য আসবে না। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কী করণীয়, তা মানুষকে জানাতে হবে। বস্তুত দুর্ঘটনা এড়াতে দেশের সব আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যালসংশ্লিষ্ট কারখানা ও গোডাউন স্থানান্তরের বিকল্প নেই। নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো কোনো অগ্নিকাণ্ড কেউ আশা করে না। এ সমস্যাকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জিইয়ে রাখার চেষ্টা করলে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।