প্রকল্পে বাহুল্য ব্যয়


মহামারির প্রকোপ কমতে না কমতেই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা-এ প্রেক্ষাপটে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বন্ধ ছিল উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানি দেওয়া। পরিপত্রের ফাঁকফোকরের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ‘মিটিং সম্মানি’ নেওয়া অব্যাহত রেখেছেন কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, গত অর্থবছরের জন্য সম্মানি স্থগিত করা হলেও সে নির্দেশ কতদিন কার্যকর থাকবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি জারি করা পরিপত্রে। বৈশ্বিক মন্দাবস্থার পরিবর্তন না হলেও এ ধরনের সম্মানি নেওয়া কতটা নৈতিক ও যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা দরকার। আমরা মনে করি, বর্তমান বাস্তবতায় মিটিং করে সম্মানির নামে অর্থ নেওয়াটা অনৈতিক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে কতদিন এ নিয়ম বলবৎ থাকবে, এ বিষয়ে সময় সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। তাহলে ধরে নিতে হবে সেটি চলমান আছে। নতুন নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কর্মকর্তারা এ ধরনের সম্মানি গ্রহণে উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত। অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তাদের নির্ধারিত নিজস্ব দায়িত্বের বাইরেও বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিতে হয়। যেহেতু অফিস সময়ের মধ্যেই কর্মকর্তারা সেসব মিটিংয়ে অংশ নিয়ে থাকেন; সেহেতু সেটিও তাদের দায়িত্বের অংশ বলে বিবেচনা করা উচিত। বলা হয়ে থাকে, কোনো কোনো কর্মকর্তা সম্মানি না দিলে মিটিংয়ে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মকর্তাদের উচিত নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরেও মিটিংয়ে সময় দেওয়া এবং উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দেওয়া। উল্লেখ্য, বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের সম্মানি বাবদ সরকারি তহবিল থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। উন্নয়ন প্রকল্পে অপচয় ও দুর্নীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ সফরের কারণে অর্থের অপচয়ের বিষয়টিও অজানা নয়। ইতঃপূর্বে ‘ঘাস চাষ’, ‘পুকুর খনন’ প্রভৃতি শিখতে বিদেশ সফরের প্রস্তাব সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা অহেতুক বিদেশ সফরের মতো ব্যয়বহুল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন, এটাই কাম্য। একনেক বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ও টাকা বাড়ানোর ধারা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরও প্রকল্পে অপচয়ের খবর মিলছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করে সরকারি কর্মকর্তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করা না গেলে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে যতই পরিকল্পনা করা হোক, কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরির আশঙ্কা থেকেই যায়।