ভোটে সহযোগিতা করলেও ব্যবস্থা নেবে বিএনপি
অনলাইন নিউজ ডেক্স
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাদের বহিষ্কারের তালিকা বেড়েই চলেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২৯ মে তৃতীয় ধাপের ভোটে যাওয়া ৫১ নেতাকে বুধবারও প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এ নিয়ে ২০০ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বহিষ্কারের তালিকা বাড়লেও দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। শুধু প্রার্থী হলেই নয়, উপজেলার ভোটে কেউ সহযোগিতা করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রথম ধাপের ভোটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় এমন ৭ নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। যাদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওইদিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছে। আবার একজনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দলটির হাইকমান্ড অভিযোগের বিষয়ে অবগত হয়ে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দিয়ে তদন্ত করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে ৮ মে প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃতদের মধ্যে নির্বাচিত ও পরাজিত অনেকেই দলে ফিরতে চান। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে তারা কেন্দ্রীয় দপ্তরে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেওয়া ৮০ নেতাকে বহিষ্কারের পর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে যাওয়া ৬৯ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ২১ মে। সর্বশেষ বুধবার তৃতীয় ধাপে ভোটে যাওয়া ৫১ জন নেতাকে বহিষ্কার করে দলটি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ২৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন নেতা রয়েছেন। রংপুর বিভাগে এ ধাপেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১২ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে দল থেকে শোকজ করা হয়েছিল। প্রথমদফার ভোটে সহযোগিতার অভিযোগে সাত নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো নেতা মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন নীতিনির্ধারক জানান, বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেখছেন।
সূত্রমতে, এই সাত নেতার মধ্যে দুজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। এর মধ্যে একজন নেতার বাড়ি টাঙ্গাইল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজ জেলায় প্রথমদফার দুই উপজেলার নির্বাচনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যার অডিও দেওয়া হয়েছে। এ দুই উপজেলার ভোটের হারও ছিল ৫০ শতাংশের বেশি। রাজশাহী বিভাগের একটি জেলার আরেক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজ জেলার দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বেঠক করেছেন। এই দুই উপজেলায় ৬৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। মহিলা দলের একজন নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের এক প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার। ওই নেত্রীর বাড়ি ফরিদপুরে। এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি দলের হাইকমান্ডকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের দুটি উপজেলার চারজন দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতা মুখে মাস্ক পরে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। যার ছবিও প্রমাণ হিসাবে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তই সঠিক। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা ভোটে গিয়েছেন তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে কিছু নেতার কর্মকাণ্ড দলকে বিব্রত করছে। ভোট বর্জনের জন্য যেখানে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে, সেখানে দায়িত্বশীল নেতা হয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া ও ভোট দিতে উৎসাহ দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। যাদের বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে, তদন্তে প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরেও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকায় বসে নিজ নির্বাচনি এলাকার স্থানীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে বলেছেন, এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র ও এর আশপাশে দাঁড়িয়ে ছবিও যেন না তোলেন সে বিষয়েও তাদের বলা হচ্ছে, এমনও শোনা যাচ্ছে। তবে যথাযথ প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া যাচ্ছে না। নেতারা আরও বলেন, এ বিষয়ে দল এতটাই কঠোর যে সম্প্রতি রংপুর বিভাগের একটি জেলার শীর্ষ নেতার দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার একটি অডিও ফাঁস হয়েছিল। যদিও সেই অডিও ‘সুপার এডিট’ করা ছিল বলে ওই নেতা দাবি করেছেন। সেই নেতাকেও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করেছে দল। তিনি সেই ব্যাখ্যার জবাবও দিয়েছেন। দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, যদিও প্রথমদফার ভোটে জনগণ তেমন সাড়া দেয়নি, তারা বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট বর্জন করেছেন। দলের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে শতভাগ সহযোগিতা করা শুধু উচিতই নয়, এটা সব নেতাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্বে যারা অবহেলা করছেন, তারা দলের ক্ষতি করছেন।
এদিকে প্রথমদফার ভোটে গিয়ে বহিষ্কৃতদের মধ্যে অনেকেই এখন দলে ফিরতে চান। প্রথম দফার ভোটে ৭ জন চেয়ারম্যান ও ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গাজীপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ইজাদুর রহমান চৌধুরী মিলন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। মিলন জানান, ‘সব জিনিসেরই শুরু আছে, শেষও আছে। আর রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। অনেকেই বহিষ্কার হয়ে পরে দলে ফিরেছেন। গেজেট হোক, শপথ নেই; তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু জানাব।’
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট করে পরাজিত হন সরোয়ার হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন, তাকেও বহিষ্কার করা হয়। সরোয়ার বলেন, ‘বিএনপিই তো আমার ঠিকানা। দলে অবশ্যই ফিরতে চাই। দলের ফেরার জন্য আবেদন করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে দল তার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে গেছেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক দল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা পরের ব্যাপার। তবে এটা (বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার) নিয়ে আমরা এখন ভাবছি না।’
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।