মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ


প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। তবে বাণিজ্য সংগঠনগুলো মনে করে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়াতে শুল্ক ও ভ্যাট হার ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংগঠনগুলো। এমসিসিআই : ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মেট্রোপলিট্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। সংগঠনটি বলছে, এ ব্যবস্থার ফলে নিয়মিত করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন। নিয়মিত করপ্রদানকারীদের জন্য এটি একটি শাস্তি হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কালোটাকার ওপর সর্বোচ্চ হারে কর আরোপসহ জরিমানার বিধান প্রবর্তন করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এমসিসিআইর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনার গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, করব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো তথা জনগণকে যথাযথ সেবা দেওয়ার আরও সুযোগ রয়েছে। এমসিসিআই মনে করে, প্রতি তিন মাস অন্তর বাজেটের একটি অন্তর্বর্তী মূল্যায়ন হওয়া দরকার। সে অনুযায়ী বাজেট সংশোধন করা যেতে পারে। এমসিসিসিআই বলেছে, আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করতে গিয়ে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় সীমিত করার জন্য যথাযথ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সংগঠনটি মনে করে, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের অংক বাড়ানোর কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ভবিষ্যৎ ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে। ডিসিসিআই : প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়, বাজেট ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন আমদানি শুল্ক ও উৎসে কর কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা রয়েছে। প্রায় ৩০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজে আসবে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংগঠনের সভাপতি সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতের ঋণের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ২০২৪-২৫, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কর ব্যবস্থা চালুকরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। এছাড়া এসএমই খাতের জন্য পৃথক ট্যাক্স কোড প্রবর্তন এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওয়ায় কর প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণের আহ্বান জানান। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার এই বাজেটে বেশকিছু জায়গায় কর ও মূসক কমিয়েছে, আবার কিছু কিছু পণ্যের ওপর করহার বেড়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে তা ব্যবসা-বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে না। বাজেটের ভালো উদ্যোগগুলোকে বাস্তবায়ন করাই এ বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। ফিকি : প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে বলে মনে করে ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। তবে বাজেটে কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস প্রশাসনের অটোমেশনের জন্য কোনো বরাদ্দ বা নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ধরনের সংস্কারের অভাবে ভ্যাট রেয়াত সম্পর্কিত জটিলতা এবং ব্যবসার ওপর সম্ভাব্য আর্থিক চাপ অব্যাহত থাকবে। ব্যবসার ওপর প্রশাসনিক বোঝা কমাতে ধারাবাহিক সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি। অ্যামচেম : মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ আর স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)। বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন, যা আর্থিক ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে অংশীজনদের সম্পৃক্ততা এবং সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতির কাঠামো ঠিক রাখতে কার্যকর হবে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে ফরেন কারেন্সি টার্ম বা ফিক্সড ডিপোজিট সেবা চালু, এসএমই খাতের নীতি সংস্কার ও তহবিল বাড়ানো, করমুক্ত আয়ের সীমা প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা, ইপিজেড এবং হাইটেক পার্কে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।