আওয়ামী লীগে সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে মামলা না থাকলেও দেখামাত্র তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
১৭ই ডিসেম্বর\'২৫ সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ বিকেএমইএ ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে ছাত্র-জনতার উপস্থিতে পুলিশকে এমন নির্দেশনা দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের’ আইনের আওতায় না আনলে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ প্রধান কার্যালয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশকে ছয়টি মিনি পিকআপ ভ্যান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। খবর পেয়ে বিকেএমইএ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্রশক্তি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন- এনজিবি এবং ওয়ারিয়র্স অব জুলাই নারায়ণগঞ্জ মহানগরের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠান শেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বের হলে তাকে ঘিরে ধরেন ছাত্রদল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্রশক্তি সহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো- জুলাই আন্দোলনের সময় লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় মূল আসামিকে গ্রেফতার, ওসমান পরিবার ও তাদের দোসরদের গ্রেফতার, বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা বাণিজ্য বন্ধ, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনে তদবির বাণিজ্য বন্ধ করা, সন্ত্রাসী গ্যাং প্রতিরোধ ও মাদক বন্ধ করা, সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো ও সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের দাবিগুলো ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
উপস্থিত ছাত্রনেতারা পুলিশ ‘মামলা নেই’ বলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করছে না বলে দাবি করেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সীকে সামনে ডেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্দেশ দেন, আওয়ামী লীগের যারা সন্ত্রাসী, তার বিরুদ্ধে মামলা আছে কি না, সেইটা বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের সাথে সাথে আইনের আওতায় নিয়ে আসবা। আর আইনের আওতায় না আনতে পারলে তোমাদের বিরুদ্ধেও কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় ওসমান হাদির সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও তার ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যা চেষ্টার মিশনের সাথে জড়িত কয়েকজন গ্রেপ্তার করেছি, রিমান্ডেও নিয়েছি। বাকি কাজও আস্তে আস্তে আমরা করবো।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিএনপির মনোনীত নারায়ণগঞ্জে-৫ আসনে যিনি নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। কে নির্বাচন করবে, কে নির্বাচন করবে না, এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটাতে আমাদের বলার মতো কিছু নেই।
নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা তো একটা বড় ধরনের শব্দ। আপনারাও তো সবাই আজকে এখানে আসছেন। আপনারাও তো বলতে পারতেন, আমাদের নিরাপত্তা সংকট আছে, আমরা কেউ আসবো না। এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। উনি নির্বাচন কেন করবে না।
সম্প্রতি সাংবাদিকরা অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আলু নিয়ে কেন কথা বলেন- বিক্ষোভকারীদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ওটা কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান ছিল। যেহেতু কৃষকের সমস্যাগুলো সাধারণত কেউ বলে না, তাই সে প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম। কারণ আমি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও আছি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি গাজী জসিম উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ও শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের’গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, আমাদের অভিযান অলরেডি চলছে, চেকপোস্ট রয়েছে।