সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে এগুলো বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা। প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা। সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
তাদের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, যত ঝঞ্ঝা, যত সাইক্লোন, ঝড় আসুক না কেন, আমরা তা মোকাবিলা করে একটি সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আমাদের পক্ষ থেকে নেব। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়। ভোটার ও রাজনৈতিক দলের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। আপনারা সহযোগিতা করলে আলহামদুলিল্লাহ, না করলে ইন্নালিল্লাহ।
সোমবার ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। এদিন লেবার পার্টি সংলাপে অংশ নেয়নি। দলটি আরেকদিন সংলাপের সময় চেয়ে আবেদন করেছে। এদিন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে সংলাপে ডাকায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট এবং কল্যাণ পার্টির একাংশ। সোমবার ইসিতে উপস্থিত হয়ে কল্যাণ পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ বলেন, নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং আমি, তুমি ও ডামি নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির একাংশের বিতর্কিত চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি জুলাই বিপ্লবের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন এবং ওনার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ও নির্বাচনি এলাকায় একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়ে কমিশন পুরো প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সংলাপে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, যেহেতু অনাস্থা আছে, রাতে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হয়। তাই অনাস্থা ও অবিশ্বাসের পরিবেশে পোস্টাল ব্যালট এবং প্রবাসীদের ব্যালটের নিরাপত্তা বিশেষভাবে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, দলগুলোকে আচরণবিধি কীভাবে মানাবেন, সেটি ঠিক করতে হবে। বড় দলের প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবেন? অতীতে আমরা দেখিনি। বিধিভঙ্গের জন্য দুটি, ৫টি, ১০টি আসনে প্রার্থিতা বাতিল করলে বাকিরা সোজা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কোনো দলের এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে থাকতে দেবেন না। আপনারা পারবেন কি না জানি না। ভোটাররা ভোট দেবে। এজেন্ট কী করবে? বড় দুই দলের লোকই থাকে ভেতরে। ছোটখাটো দলের লোক তো কাছে থাকতে দেয় না। সুতরাং কোনো এজেন্ট ভেতরে থাকতে দেবেন না।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, ব্যানার ও পোস্টার বিলীন করা সঠিক হবে না। পোস্টার ছাড়া প্রার্থীদের জনগণের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম।
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বলেন, যে কোনো মূল্যে কালোটাকার প্রভাব বন্ধ করতে হবে। তা না পারলে তামাশার নির্বাচন হবে।
ইসিকে স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবালয়ের টেবিল থেকে যদি ইসি নিয়ন্ত্রিত হয়, সে নির্বাচন কমিশন কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। ইতোমধ্যে দেখেছি, বিশেষ করে একটি দলের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে। দেখলাম ওনারা ওনাদের অবস্থান ঠিক রাখতে পারেননি। এতে ইসির স্বাধীনতা, দৃঢ়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ইসি স্বাধীন নয় বুঝতে পেরেছি। ইসি স্বাধীন না হলে জাতির কাছে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক এবিএম ফুয়াদ বলেন, কমিশনকে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী কাঠামো ঠিক করতে হবে, যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হয়। এআই-এর অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে হেন কোনো বাজে কাজ নেই যা আমার নামে ছড়ানো হচ্ছে না। সব দলের লোক এটা প্রচার করছে। মোবাইলে নিয়ে নিয়ে চায়ের দোকানে গ্রামবাসীকে দেখাচ্ছে; দেখায় ওই যে টাক আছে না? টাকলু, এসেছে কত ভালো ভালো কথা বলে, কী করে দেখ। দোকানে দোকানে গিয়ে এখনই দেখাচ্ছে। কীভাবে করবেন (বন্ধ)? কিছু একটা করে দেখান না। আপনি যদি এটা এখনই করতে না পারেন, আমি কনফিডেন্স পাব কীভাবে?
আইন করে নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে রাখার দাবি জানান বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভাপতি আবু লায়েস মুন্না। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান জামানতের টাকা কমানোর প্রস্তাব দেন।
বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে সংলাপ কাল : বুধবার সকালের পর্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে (এনডিএম) এবং বেলা ২টা থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলকে (মার্কসবাদী) আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি।