পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এর মৌলিক ধারাগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে পাহাড় আজও অশান্ত। আদিবাসী জনগণের ভূমি, সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব রক্ষা এবং শান্তি ফেরাতে চুক্তি বাস্তবায়নই একমাত্র পথ।
চুক্তির ২৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক সংগঠনের সহসভাপতি অমর শান্তি চাকমা। এতে বলা হয়, চুক্তির মোট ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৮টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হলেও ২৯টি এখনও পুরোপুরি অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো।
এতে মানবাধিকার কর্মী ও নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির বলেন, ১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষই আদিবাসী ছিলেন। দমন-পীড়ন, বৈষম্য ও ভূমি হারানোর চাপে তাদের সশস্ত্র আন্দোলনে যেতে বাধ্য করা হয়। আন্দোলনের ফলে একটি চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে ফিরে যেতে পারে। বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন না করে রাষ্ট্র আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কে এস মং মারমা।
এদিকে গতকাল অন্য এক সভায় শান্তি চুক্তি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সভায় পরিষদের মহাসচিব মো. আলমগীর কবির বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র, হত্যা, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়িদের ছয়টি সশস্ত্র সংগঠন এ সব অপরাধে জড়িত।
রাঙামাটিতে গণসমাবেশ
রাঙামাটি অফিস জানায়, শান্তিচুক্তির ২৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) আয়োজনে গতকাল গণসমাবেশ হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেন, চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে বৈষম্য ও অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে।
শহরের জিমন্যাসিয়াম মাঠ প্রাঙ্গণে গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেএসএসের জেলা শাখার সভাপতি ডা. গঙ্গা মানিক চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা প্রমুখ।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য নূরুল আলম প্রমুখ।
বান্দরবানে দুই আয়োজন
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) আয়োজনে রাজার মাঠে সমাবেশ হয়েছে। এছাড়া বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, বিশেষ অতিথি ছিলেন সেনাবাহিনীর ২৮ বেঙ্গল বান্দরবান সদর জোন-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ হুমায়ুন রশীদ পিএসসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেনিয়া চাকমা প্রমুখ।
রাজার মাঠে সমাবেশে পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক উইন মং জলি প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, দেশ বিনির্মাণে জুম্ম জনগণকে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।