ইসরায়েলের প্রশ্রয়ে গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২১, ২০২৫ | ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

গত নভেম্বরের গোড়ার দিকে দক্ষিণ গাজার বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ আবু মুস্তাফাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি যখন মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন মোটরসাইকেলে আসা এক বন্দুকধারী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনার পর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস দাবি করে, ইসরায়েল সমর্থিত মিলিশিয়ারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহত লোকটি একজন ইমাম। সিএনএন জানায়, হত্যাকাণ্ডটি হুসসাম আর আস্তাল নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ঘটে বলে হামাস দাবি করে। এই আস্তাল ইসরায়েলি সমর্থিত একটি মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য, যিনি গাজার একজন সাবেক বন্দি। এখন তিনি প্রকাশ্যে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। গাজার একটি গ্রামে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে আস্তালের গ্রুপ। দুই বছর ধরে যুদ্ধের পর গাজা এখন স্পষ্টভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। একটি অংশ ইসরায়েলি সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে। অপর অংশে মূলত হামাস শক্তিশালী। ইসরায়েলের অংশ (তথাকথিত হলুদ রেখার পূর্বে) মূলত জনমানুষের সংখ্যা কম। এই অংশেই আস্তাল তার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করছেন। এ রকম ছোট ছোট সশস্ত্র গোষ্ঠী এই এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা ইসরায়েলের প্রশ্রয়ে সশস্ত্র কার্যক্রম চালায়। ইসরায়েলের অংশে কমপক্ষে পাঁচটি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয়। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সশস্ত্র ছোট ছোট গ্রুপকে একত্রিত করে শক্তিশালী হতে চায়। সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সদস্যরা প্রায়ই হাতে রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা হামাসের চরম বিরোধী। এ রকম কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে পপুলার ফোর্সেস, পপুলার আর্মি, কাউন্টার টেররিজম স্ট্রাইক ফোর্স, পপুলার ডিফেন্স আর্মি ইত্যাদি গ্রুপ সক্রিয়। পপুলার ডিফেন্স আর্মির কমান্ডার হাল্লাস সিএনএনকে বলেন, তার দলটি মূলত হামাসের হাতে থাকা সাবেক বন্দিদের নিয়ে পরিচালিত হয়। গাজায় ঠান্ডায় মরছে শিশুরা আলজাজিরা জানায়, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এএসএফ) সতর্ক করেছে, গাজায় তীব্র শীতে শিশুরা মারা যাচ্ছে। ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তায় অবরোধ শিথিল করার আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে তীব্র হাইপোথার্মিয়ায় ২৯ দিনের শিশু সাইদ আসাদ আবেদিনের মৃত্যু হয়েছে। শীতকালীন ঝড় ইতোমধ্যেই গাজায় ভয়াবহ জীবনযাত্রা ডেকে এনেছে। এর আগে মোহাম্মদ খলিল আবু আল-খাইর নামে এক শিশু গরম কাপড়ের অভাবে মারা যায়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাসে ফিরেছেন। ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি। বিধ্বস্ত ভবনগুলোতে এখন প্রায় ৫০০ পরিবার আশ্রয় নিচ্ছে। দুই বছরের যুদ্ধে গাজার ৯৫ শতাংশেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। গোলায় ছয় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নিহত সংবাদ সংস্থা ওয়াফা শুক্রবার রাতে জানায়, গাজা সিটির পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। এতে শিশুসহ ছয়জন নিহত হন। এ নিয়ে যুদ্ধবিরতির পর প্রায় ৪০০ জনের প্রাণ গেল। দুই বছরের হামলায় কমপক্ষে ৭০ হাজার ৬৬৯ জন নিহত এবং এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৫ জন আহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবরের হামলা তদন্তের ঘোষণা নেতানিয়াহুর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি ওঠার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘটনা তদন্তের অনুমোদন দিয়েছেন। তদন্তে নেতৃত্ব দেবেন সংসদের স্পিকার আমির ওহানা। এ ক্ষেত্রে ছয় সদস্যের কমিশন গঠনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত দল কাল সোমবার পশ্চিম জেরুজালেমে বৈঠক করবে।