মাথাব্যথা মানে মাইগ্রেন নয়

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ | ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

মাথাব্যথা একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা, যা প্রায় প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ জীবনে কখনও না কখনও অনুভব করেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মাথাব্যথায় ভোগেন। মাথাব্যথা মানে মাইগ্রেন নয়, অন্য অনেক কারণেও হতে পারে। মাথাব্যথার প্রধান কারণগুলো মাথাব্যথা সাধারণত দুই প্রকারের হতে পারে: প্রাথমিক এবং সেকেন্ডারি । প্রাথমিক মাথাব্যথা এগুলো হলো সেই ধরনের মাথাব্যথা, যা নিজে একটি রোগ, অন্য কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যার লক্ষণ নয়। প্রধান উদাহরণগুলো হলো– lটেনশন টাইপ হেডেক (সবচেয়ে বেশি দেখা যায়) lমাইগ্রেন lক্লাস্টার হেডেক সেকেন্ডারি মাথাব্যথা এগুলো অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার (যেমন রোগ, আঘাত বা সংক্রমণ) লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে: lসাইনাসের প্রদাহ (সাইনোসাইটিস) lমাথায় আঘাত বা ট্রমা lমস্তিষ্কের টিউমার বা রক্তনালিতে সংক্রমণ lদাঁতের রোগ বা গ্লুকোমা lএপিলেপ্সি বা মৃগী রোগ, ক্লান্তি, পানিশূন্যতা, অপর্যাপ্ত ঘুম, দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অত্যধিক মদ্যপান ও ধূমপান, অতিরিক্ত ব্যথানাশক ব্যবহার, খুব ঠান্ডা পানীয় দ্রুত খাওয়া এবং হরমোনাল পরিবর্তনও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। প্রধান প্রকারভেদ ও প্রতিকার টেনশন টাইপ মাথাব্যথা এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মাথাব্যথা। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বা টেনশনের কারণে মাথার পেশিগুলোতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ব্যথা শুরু হয়। এই ব্যথা সাধারণত মাথা ও ঘাড়ের চারপাশে একটি ব্যান্ড বা চাপ অনুভব করায়। প্রতিকার lসুশৃঙ্খল দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা। lপর্যাপ্ত ঘুম এবং শিথিলকরণের (Relaxation) অভ্যাস। মাইগ্রেন এটি অন্যান্য মাথাব্যথার চেয়ে অধিকতর তীব্র। ব্যথা সাধারণত মাথার একপাশ দিয়ে শুরু হয় এবং ধাপে ধাপে অস্বস্তিকর বা তীব্র আকার ধারণ করে। এই ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথার পাশাপাশি বমি ভাব বা বমি হওয়া, আলো ও শব্দে সংবেদনশীলতা বাড়া এর প্রধান লক্ষণ। প্রতিকার lচিকিৎসকের অধীনে নিয়মিত চেকআপ এবং ওষুধ সেবন। lট্রিগার পরিহার: কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা, উচ্চ শব্দ, অতিরিক্ত বা কম আলো, নির্দিষ্ট কিছু খাবার এবং পিসি/টিভির সামনে দীর্ঘ সময় থাকা এড়িয়ে চলা। lমেডিটেশন এবং নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। ক্লাস্টার মাথাব্যথা ক্লাস্টার মাথাব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং তীব্রতা দ্রুত বাড়ে। ব্যথা সাধারণত মাথার এক পাশে শুরু হয়ে চোখের পেছনের দিকে তীব্রভাবে অনুভূত হয়। ব্যথার সময় আক্রান্ত চোখটি লাল বর্ণ ধারণ করতে পারে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে, এবং নাক দিয়ে জল ঝরা বা নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রতিকার lমাইগ্রেনের চিকিৎসার মতোই ট্রিগার এড়িয়ে চলতে হবে। lতীব্র ব্যথা নিয়ন্ত্রণে স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ‘ভেরাপামিল’ (Verapamil) জাতীয় ওষুধ বা অন্যান্য প্রতিরোধমূলক থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে। lঅ্যালকোহল এবং ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিত। সাইনাসজনিত মাথাব্যথা lকারণ: মাথার হাড়ের মধ্যে অবস্থিত ফাঁকা জায়গা (সাইনাস) থাকে। সর্দি বা অ্যালার্জির কারণে এই সাইনাসগুলোতে প্রদাহ (সাইনোসাইটিস) সৃষ্টি হলে বাতাস আটকে যায়, যার ফলে মাথাব্যথা করে। ব্যথা সাধারণত কপালে, গালের দু’দিকে বা চোখের পেছনে হয় এবং সামান্য জ্বরও থাকতে পারে। প্রতিকার: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন। lবাষ্প গ্রহণ: গরম পানির বাষ্প টেনে নেওয়া আরাম দিতে পারে। lগরম সেঁক: গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে কপাল, চোখ বা নাকের দুই পাশে সেঁক দিলে সাইনাসের বদ্ধতা কাটতে সাহায্য করে। হরমোনাল মাথাব্যথা নারীর মধ্যে ঋতুচক্র, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রার (বিশেষত এস্ট্রোজেনের) পরিবর্তন হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট সেবনের পরেও হরমোনের এই পরিবর্তনগুলো অনেকের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের জন্য হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি উপকারী ফল বয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি, টেনশনমুক্ত দৈনন্দিন জীবন, পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি পান সহায়ক। মাথাব্যথা প্রতিরোধের জন্য জীবনযাত্রায় সতর্ক থাকা জরুরি: lঅতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক সেবন পরিহার। lচা-কফি বা ক্যাফেইনের ব্যবহার সীমিত করা। lসময়মতো খাবার খাওয়া এবং ক্ষুধার্ত না থাকা। lঅতিরিক্ত রোদ, গরম আবহাওয়া বা অতিরিক্ত শারীরিক/মানসিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলা। lঅনিয়মিত ও অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা। [বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]