ওয়াশিংটনের ‘ভারত প্রথম’ যুগের সমাপ্তি, পাকিস্তানের দিকে বিস্ময়করভাবে ঝুঁকেছেন ট্রাম্প

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৪, ২০২৫ | ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

দক্ষিণ এশিয়ায় ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের ‘ভারত প্রথম’ নীতি কার্যকরভাবে শেষ হয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আঞ্চলিক নীতিতে বড় পরিবর্তনের পর ২০২৫ সালে পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক একটি রূপান্তরমূলক পর্যায়ে প্রবেশ করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত রোববার প্রকাশিত “ট্রাম্প’স সারপ্রাইজিং পলিসি টার্ন অন পাকিস্তান” শীর্ষক ওই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, গত জানুয়ারিতেও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্ক খুব একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল না। ইসলামাবাদকে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, রাজনৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও কূটনৈতিকভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখা হতো। ২০২২-২০২৩ সালের বন্যা থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানো ও মোট দেশজ উৎপাদনের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশটির অর্থনীতি এখনও বিদেশি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা সতর্ক করেন, পাকিস্তান ১৯৯০-এর দশকের পর ‘সবচেয়ে গুরুতর’ জাতীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। তথাপি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারে পরিণত হয়। খুব কম দেশই এত দ্রুত বা নাটকীয়ভাবে এমন পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিকশিত পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্তম্ভ হিসেবে পাকিস্তান আবির্ভূত হয়। কৌশলগতভাবে ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারাও পাকিস্তানকে অস্বস্তি নিয়ে দেখেছিলেন। চীনের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিশেষ করে এসব উদ্বেগকে আরও জোরালো করে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই বেইজিংয়ের সঙ্গে ‘সমুদ্রের চেয়ে গভীর, পাহাড়ের চেয়েও উঁচু’ বন্ধুত্ব নিয়ে গর্ব করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের উদীয়মান পররাষ্ট্রনীতি বৃত্তের প্রত্যাশা স্পষ্ট– ভারতের ওপর দ্বিগুণ চাপ প্রয়োগ করা; কোয়াডকে তার ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নোঙর হিসেবে শক্তিশালী করা ও ভারতের দীর্ঘস্থায়ী স্বার্থে ইসলামাবাদকে পাশে রাখা। ওয়াশিংটন যখন ‘ভারত প্রথম’ নীতিতে ছিল, তখনও তাদের মধ্যে ভারতের বেশ কিছু আচরণ নিয়ে উদ্বেগ ছিল। ভারতের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রাধান্য দেওয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নাগরিক স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতা থেকে শুরু করে তার অসম সামরিক কর্মক্ষমতা এবং ক্রমবর্ধমানভাবে কূটনৈতিক অনমনীয়তা নিয়ে ছিল এ উদ্বেগ। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা বা অবহেলা করা হলেও বিষয়গুলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী হিসেবে ভারতের নির্ভরযোগ্যতার ওপর সন্দেহ তৈরি করছে। নিবন্ধে উল্লেখ আছে– পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথম সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে সন্ত্রাসবাদবিরোধী গোপন আলোচনার ধারাবাহিকতায়, যা ইঙ্গিত দেয়– ইসলামাবাদ অবশেষে বাস্তব সহযোগিতায় জড়িত হতে ইচ্ছুক। গত মার্চে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তানের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন, তখন ওয়াশিংটন হতবাক হয়ে যায়। এ মন্তব্যগুলো দীর্ঘস্থায়ী নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত হানে। সেই সঙ্গে এ ভাষণ পাকিস্তানকে একটি নতুন ও শক্তিশালী মিত্র হিসেবে বিবেচনার নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করে। ট্রাম্পের কর্মকর্তারা, যারা একসময় পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন– তারা এখন তাদের ঘনিষ্ঠ, কার্যকর, এমনকি নমনীয় হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। একটি ইতিবাচক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আরও বেশি পদক্ষেপের মাধ্যমে আরও সহযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা একে অপরকে প্রশংসা করছে। পাশাপাশি অংশীদারিত্ব এমন গতিতে আরও গভীর হয়েছে, যা সম্ভব বলে কয়েক মাস আগেও ওয়াশিংটনে খুব কম লোকই বিশ্বাস করতেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তীব্র সংঘর্ষে পাকিস্তানের প্রদর্শনী ও ফলাফল ট্রাম্পকে হতবাক করে। এ সংঘাত সামরিক শৃঙ্খলা, কৌশলগত মনোযোগ ও ক্ষমতার এমন এক স্তর প্রদর্শন করে, যা ওয়াশিংটন চিন্তাও করেনি। ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা পাকিস্তানকে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হিসেবে আড়াল করে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন তারা আবার এটিকে একটি বড় আঞ্চলিক ভূমিকা পালনকারী হিসেবে উল্লেখ করতে শুরু করেছেন।