মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বিধ্বস্ত ভবনে বাঁচার চেষ্টায় গাজাবাসী

প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫ | ৭:০২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইসরায়েলের হামলায় গাজার বিধ্বস্ত ভবনের একটি ঘরে আগুনের ওপর ছোট টিনে কফি তৈরি করছিলেন আমানি হালাওয়া। সূর্যালোকের পাতলা রশ্মি কংক্রিটের টুকরোর ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করছিল। আমানি, তাঁর স্বামী মোহাম্মদ এবং তাদের সন্তানরা কংক্রিটের টুকরো দিয়ে ঘরটি মেরামত করেছেন। উন্মুক্ত ধাতব রডের সঙ্গে ব্যাগ ও কাপড়চোপড় ঝুলিয়ে রেখেছেন। রান্নাঘরের মেঝেজুড়ে হাঁড়িপাতিল সাজিয়েছেন। বাড়ির দেয়ালজুড়ে রং, কালির দাগ মনে করিয়ে দেয় আগের পারিবারিক স্মৃতি। গাজা শহরের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে এখন এভাবেই ধরেছে জীবনের রং। পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকে কখন ভাঙা দেয়াল ধসে পড়বে। এ জন্য তাদের ঘুমও হয় না ঠিকমতো। কারণ চলতি ডিসেম্বরেই ভবন ধসে কমপক্ষে ১১ জন মারা গেছেন। আলজাজিরা জানায়, গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। টানা এই যুদ্ধে হাজার হাজার ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিধ্বস্ত ভবনগুলো এখন ভূতুড়ে অবস্থায় পড়ে আছে। তবে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা সেই বিধ্বস্ত ভবনে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। ঝুঁকি নিয়ে হলেও তারা আবার পরিবার গোছাচ্ছে। যে কোনো সময় এসব ভবন ধসে পড়তে পারে জেনেও নারী-শিশুদের নিয়ে পরিবার পেতেছে বাসিন্দারা। হালাওয়া পরিবারের ভবনটি এখনও গাজা শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপরে দোতলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের ছাদের বরাবর বেরিয়ে আছে বাঁকানো ধাতব রড। তবুও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাড়িটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। উপত্যকার ৭০ শতাংশেরও বেশি ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অন্যদিকে গাজা সরকারি জনসংযোগ বিভাগ সোমবার এক বিবৃতিতে জানায়, নির্ধারিত ৪৩ হাজার ৮০০টি ট্রাকের বদলে গাজায় মাত্র ১৭ হাজার ৮১৯টি ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করেছে, যা মোট প্রতিশ্রুতির মাত্র ৪১ শতাংশ। জ্বালানি সরবরাহেও মারাত্মক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। গাজায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা মিডলইস্ট মনিটর জানায়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার বলেছেন, ইসরায়েল উত্তর গাজায় বাস্তুচ্যুতদের বসতির জায়গায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেটজ এ খবর দিয়েছে। দ্য নিউ আরব জানায়, চারপাশে কুমির থাকবে– ফিলিস্তিনিদের জন্য এমন কারাগার বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের উগ্রপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গভির। হামলা, গণগ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত জেরুজালেমের উত্তরে আল-রাম শহরে অভিযান চালায়। এ সময় তারা ধোঁয়া বোমা ফাটায়। এতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি শ্বাসরোধে আক্রান্ত হন। পশ্চিম তীরজুড়ে গণগ্রেপ্তার অভিযানে ৪৩ ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। হেবরনের আল-তাবাকা গ্রাম, দুরার শহর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম তীরের আল-ফাওয়ার শরণার্থী শিবির থেকে ২২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। গাজা শহরের পূর্বাঞ্চল ও তুফাহপাড়ায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে হামলা হয়েছে। দেইর আল-বালাহের পূর্বে এবং দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের পূর্বেও বিমান হামলা করা হয়। দুই বছরের যুদ্ধে অন্তত ৭০ হাজার ৯৩৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলের জবাবদিহি চান ডেমোক্র্যাটরা প্রায় ৫০ জন হাউস ডেমোক্র্যাট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি পদক্ষেপ যুদ্ধবিরতি কাঠামোর জন্য হুমকিস্বরূপ। বেসামরিক নাগরিকদের ক্রমাগত হত্যার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। প্রতিনিধি মার্ক পোকান ও ম্যাডেলিন ডিনের নেতৃত্বে আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পকে লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি সরকারের ওপর সর্বাধিক কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হোক। ক্রমাগত সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটাতে এটা করতে হবে।’