সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচন আজ বুধবার। তবে ভোটের এক দিন আগে সোমবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক বিচারপতি মো. মুনসুরুল হক চৌধুরীর পদত্যাগে নাটকীয়তার মোড় নিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠনের এ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে সরকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে। বিকেলে পাল্টাপাল্টি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার পর রাতে ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নষ্ট করার ঘটনা এবং শাহবাগ থানায় মামলাও হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভোট হবে কিনা এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যেই উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ সাত পদে আওয়ামী লীগ এবং দুই সহসম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ সাত পদে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা নেতৃত্বে রয়েছেন। পূর্বঘোষিত তপশিল অনুযায়ী বুধ ও বৃহস্পতিবার ভোট হওয়ার কথা। কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটার প্রায় ৯ হাজার। অবশ্য এবার তপশিল ঘোষণার পর থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি নিয়ে সরকার ও বিএনপিপন্থিরা পাল্টপাল্টি কমিটি ঘোষণা করে। এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে আলোচনার পর ২ মার্চ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর শান্তিপূর্ণ প্রচার-প্রচারণা শেষ হলেও সোমবার রাতে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন মুনসুরুল হক। এরপর নতুন আহ্বায়ক নিযুক্ত করা নিয়ে সমিতির বর্তমান নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। গতকাল বিকেলে আওয়ামীপন্থিরা বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করে। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট এএসএম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক নিযুক্ত করার কথা জানায় বিএনপিপন্থিরা। সরকারপন্থিরা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) নামে এবং বিএনপিপন্থিরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ (নীল প্যানেল) নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মোমতাজউদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে আব্দুন নুর দুলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুজনই সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক। অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রহুল কুদ্দুস কাজল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সমিতির সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করে থাকেন। বিকেল ৫টায় দায়িত্ব পাওয়ার পর রাত ৮টার দিকে ব্যালট পেপার স্বাক্ষর শুরু করি। কয়েকটি স্বাক্ষরের পর বিএনপি প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে ১০-১২ জন আইনজীবী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কক্ষে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তাঁরা কয়েকটি ব্যালট বই ছিনতাই ও নির্বাচনী সরঞ্জাম নষ্ট করে ফেলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছে।’