প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এলিট ফোর্স র্যাব দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের কাছে নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবেই বিবেচিত বলে আমার বিশ্বাস। কিছু লোক থাকবেই সবসময় বিরোধিতা করতে। আর মাঝে মাঝে কিছু উল্টা-পাল্টা কথাও বলবে। এগুলো কানে না নিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে আমরা আমাদের দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কিনা, সঠিক পথে আছি কিনা, এই চিন্তাটা নিজেই করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে এ বাহিনীর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য র্যাব সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। রোজা সামনে রেখে কেউ যেন খাদ্য মজুত এবং খাদ্যে ভেজাল দিতে না পারে এবং সমাজ থেকে মাদকের অপব্যবহার, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এবং সাইবার অপরাধ নির্মূলে আরও মনোযোগী হতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, বিশেষ করে র্যাবকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু করবো। এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা দরকার। দেশের উন্নয়ন দরকার এবং সেক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা বাজায় রাখতে হবে।’ সুন্দরবনে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং জলদস্যুতা মোকাবিলায় র্যাবের তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও এ বাহিনী যথাযথ দায়িত্বশীলতা, কার্যকারিতা এবং সক্রিয়তার সঙ্গে অতীতের মতো ভূমিকা পালন করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় থাকা তার সরকার ‘অগ্নিসন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপতৎপরতা’ মোকাবিলা করেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছে বলেই বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এদেশের প্রতিটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকের কাছে আজকে এলিট ফোর্স র্যাব নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ আমার অহংকার এই মূল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দিপ্ত হয়ে জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ভবিষ্যতেও এই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বশীল, কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল, সে ঘোষণা বাস্তবায়ন করেছে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই স্বপ্নের ভিত্তিতে তার সরকার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব, স্মার্ট অর্থনীতি হবে স্মার্ট বাংলাদেশে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে সেজন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ সরকার দিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বড় কথা এটা বাস্তবায়ন করতে হলে শান্তি-শৃঙ্খলা একান্তভাবে দরকার। সেজন্য লোকের কথায় কান না দিয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে যাই, অবশ্যই বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলব।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। র্যাবের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় অনুষ্ঠানে।