সেই অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেছাকে অবসরে পাঠাল সরকার রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ এনে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রাখার ঘটনায় আলোচনায় আসা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছাকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শেখ শামছুল আরেফীন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ১৬ মার্চ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (গ্রেড-১) কাজী জেবুন্নেছা বেগমকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৪৩(১)(ক) অনুযায়ী ১৮-০৩-২০২৩ তারিখ থেকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো।’ এতে আরও বলা হয়, ‘তার অনুকূলে ১৮ (আঠারো) মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ লাম্পগ্রান্টসহ ১৯-০৩-২০২৩ থেকে ১৮-০৩-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ০১(এক) বছরের অবসর-উত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করা হলো। ০৩। তিনি বিধি অনুযায়ী অবসর ও অবসর-উত্তর ছুটিকালীন সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন।’ প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৭ মে দুপুরের পর পেশাগত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে একটি কক্ষে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাকে রাত ৯টার দিকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগ এনে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ আইনে মামলা করা হয়। মামলার বাদী হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। রোজিনাকে আটকে রাখার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব জেবুন্নেছা। ‘হেনস্তাকারী’ হিসেবে তার নাম উল্লেখের পাশাপাশি তাকেও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। পরে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে সরিয়ে নেয় সরকার। এরপর থেকে তার বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদের নানা বিষয় বেরিয়ে আসতে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জেবুন্নেছার নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ও ব্যাংকের অর্থ প্রভৃতি তথ্য বের হতে থাকে। দুদকের কাছেও নানা মাধ্যম থেকে অভিযোগ আসে। অভিযোগে বলা হয়, জেবুন্নেছার নামে রাজধানীতে চারটি বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাজীপুরে ২১ বিঘা জমি, কানাডায় তিনটি বাড়ি, ও লন্ডনে একটি বাড়ি ছাড়াও শত কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। ২০ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার জহুরুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দুদক মনে করছে এসব অভিযোগের সত্যতা যাছাই করা দরকার। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে অনুসন্ধানে মাঠে নামবে দুদক টিম।