রমজান উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারি উদ্যোগে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি হচ্ছে। ২০টি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে নির্দিষ্ট স্থানে পণ্য বিক্রি করা হয়। এ কার্যক্রম মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিটি গাড়ির পেছনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এখান থেকে একজন ক্রেতার ১১০ থেকে ১৮০ টাকা সাশ্রয় হয়। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে পড়েছে সরকারি এ বিক্রয়কেন্দ্র। কোথাও পুলিশ মামলা দিচ্ছে, আবার কোথাও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মীদের। ফলে সুলভ মূল্যে গ্রাহকদের হাতে পণ্য দিতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন খামারিরা। এ অবস্থায় তাঁরা মানবিক এ উদ্যোগে পুলিশসহ সবার সহায়তা চেয়েছেন। গত ২৩ মার্চ রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে এসব পণ্য বিক্রির ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। উদ্বোধনের পর একে বিভিন্ন স্থানে চলে যায় ভ্রাম্যমাণ গাড়ি। রাজধানীর নয়াবাজারে বিক্রি শেষ করে একটি গাড়ি সন্ধ্যার দিকে খামারবাড়ির সামনে গেলে পুলিশ আটকে দেয়। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মিজানুর রহমান ওই গাড়ির (ঢাকা মেট্রো হ ১১-৩৮৯৭) বিরুদ্ধে মামলা দেন। জরিমানা করা হয় ৬ হাজার টাকা। মামলার অভিযোগে বলা হয়, রেন্ট-এ কারের গাড়ি বিক্রির কাজে ব্যবহারের জন্য আগে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। গাড়িটির মালিক আবু হান্নান বলেন, ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন পণ্য বিক্রির জন্য গাড়িটি ভাড়া নিয়েছে। গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক আছে। তারপরও কেন মামলা দিল জানি না। গাড়ির চালক মো. সাগর অভিযোগ করেন, সার্জেন্ট মিজান প্রথমে টাকা দাবি করেন। এরপর ১০ কেজি গরুর মাংস চান। আমরা তাঁকে বারবার বলেছি রমজানে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য এ গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। গাড়ির সব কাগজপত্রও ঠিক ছিল। বিক্রির কাজে ব্যবহারের জন্য বিআরটিএর অনুমোদন নেওয়া হয়নি অজুহাত দিয়ে মামলা ও জরিমানা করেন। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত সার্জেন্টের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। গত ২১ মার্চ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার এক চিঠিতে ভ্রাম্যমাণ বিক্রিয় কার্যক্রম সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে অবহতি করেন। ঢাকার ২০টি স্থানের নাম উল্লেখ করে ওই চিঠিতে কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের নিরাপত্তা চাওয়া হয়। কিন্তু উদ্বোধনী দিনেই পুলিশের মামলাকে বাড়াবাড়ি বলছেন খামারিরা। তাঁরা বলছেন, পুলিশ যানজট কিংবা অনুমতি না নেওয়ার অজুহাত তুলে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি দাঁড়াতে দিচ্ছে না। ফলে অনেক সময় নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে অন্য জায়গায় গিয়ে বিক্রি কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে ক্রেতারাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শুক্রবার সকালে সেগুনবাগিচায় কাঁচাবাজারের সামনে একটি সুলভ মূল্যের গাড়ি গিয়ে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের এসআই মামুন গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে গাড়িটি সরিয়ে দেন। এরপর আবার গাড়ি আগের জায়গায় ফিরে এলে তিনি অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে থাকেন। এরপর গফুর নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালীও হুমকি দেন। খামারিদের অভিযোগ, খুচরা বিক্রেতাদের একটি গ্রুপ সুলভ মূল্যে বিক্রি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের বিক্রি কমে যাওয়ার অজুহাতে গত বছর রমজানেও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে পণ্য দিয়ে সহায়তা করছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল। গতকাল শনিবার রাজধানীর ২০টি স্থানে ২ হাজার কেজি গরু, ১০০ কেজি খাসি, এক হাজার কেজি মুরগি, তিন হাজার লিটার দুধ ও ২৫ হাজার পিস ডিম বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকায় (বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা), খাসি প্রতি কেজি ৯৪০ টাকায় (বাজারমূল্য ১,১০০ টাকা), ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকায়, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকায় (বাজারমূল্য ৯০ টাকা) এবং ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় (বাজারে ১২ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, ২০টি গাড়ি ভাড়া করে তাঁরা পণ্য বিক্রি করছেন। বিক্রি পরিচালনা করছেন খামারের লোকেরা। আর তত্ত্বাবধান করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খামারিরা ট্রাকে করে পশু পাঠাচ্ছে। সুলভ মূল্য বিক্রির জন্য ঢাকায় পণ্য পাঠাতে গিয়েও পথে পথে চাঁদা দিতে হচ্ছে। রাজধানীতে গাড়িগুলো চলাচলের পথে পুলিশ প্রায়ই হয়রানি করছে। এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি (ট্রাফিক) সাহেদ আল মামুন জানান, সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির গাড়িকে বাধা দেওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তিনি জানেন না। কেউ মামলা কিংবা বাধা দিয়ে থাকলে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, মানুষ যেন তার সাধ্যের মধ্যে দুধ, ডিম ও মাংস কিনতে পারেন, সেজন্য সরকার খামারিদের অনুরোধ করে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম চালু করছে। মানুষের উপকারের জন্য খামারিরা পণ্য দিচ্ছে এবং আমরা তদারকি করছি। সবার উচিত এমন একটি মানবিক উদ্যোগকে সহায়তা করা। কিন্তু উল্টো পুলিশ হয়রানি করলে এ উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। গত বছরও বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির তথ্য আমার জানা নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও কিছু জানায়নি। এ রকম একটি মানবিক উদ্যোগে কারো বাধা দেওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এর পরও এ বিষয়ে খোঁজ নেব।