পশ্চিমবঙ্গে স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তিতে আছে। এ অবস্থায় নতুন দুর্নীতির কথা জানতে পেরেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভায় (পৌরসভা) অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন এ দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেস এবং দলটির নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। খবর বিবিসির। তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, তারা কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না। কিন্তু একই সঙ্গে তারা অভিযোগ তুলেছে, বিগত বামফ্রন্টের আমলেও দুর্নীতি করে অনেক শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়েছে, তারও তদন্ত হোক। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে ইডির হেফাজতে আছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জিসহ ছয়জন। ইডি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জব্দ নগদ এবং স্থাবর সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ১১১ কোটি টাকা। ওই দুর্নীতির তদন্ত চালাতে গিয়েই পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির খোঁজ পায় তারা। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শাখা ইডি জানিয়েছে, তারা স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সূত্র ধরে অয়ন শীল নামে একজনের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে এমন কিছু নথি উদ্ধার করে, যার মাধ্যমে রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভায় অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে তারা ধারণা পায়। তদন্ত সংস্থা বলছে, তারা অয়ন শীলের বাড়ি এবং আগেই গ্রেপ্তার হওয়া শান্তনু ব্যানার্জির বাড়ি, অফিসসহ ৯টি জায়গায় তল্লাশি চালান। এ সময় প্রাপ্ত নথি থেকে তারা নতুন দুর্নীতির তথ্য জানতে পারে। গ্রেপ্তার হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শান্তনু ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠজন এ অয়ন শীল। তাঁর একটি নিয়োগ পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা সংস্থা আছে। দক্ষিণ বঙ্গের ছয়টি পুরসভায় বিভিন্ন স্তরে নিয়োগের জন্য ওই সংস্থাটিকে বরাত দেওয়া হয় বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। অয়নের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ, পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়াদের সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, তারা দুর্নীতির সঙ্গে কখনোই আসপ করেনি। দলের মহাসচিব ও মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও পার্থ চ্যাটার্জিকে দল আর মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিস ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের যে ভাবমূর্তি ছিল, সেটা এখন প্রশ্নের মুখে। তাঁর ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাও। তাই আজকাল তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো প্রচারে আর ‘সততার প্রতীক’ কথাটা লেখা হয় না।