রমজান মাসকে টার্গেট করে চাষ করা বাঙ্গি ও লালমির ফলনে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার চাষীরা। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার আবাদ বেশি করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু প্রতিকূলতা আবহাওয়ার কারণে এ বছর এই ফলের ফলন ভালো হয়নি। কৃষকরা জানান, প্রচুর খরা, পোকামাকড় এবং ভাইরাসজনিত কারণে বাঙ্গি-লালমির ফলন কম হয়েছে। লোকসান পোষাতে ভালো দাম পাওয়ার কথাই বলছেন কৃষকরা। প্রতি বছর রমজানের শুরুর আগে থেকেই স্থানীয় বাজারে বাঙ্গি-লালমির পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা যায়। কিন্তু এবার রোজার চতুর্থ দিনেও বাজারে সেভাবে বাঙ্গি-লালমি দেখা যায়নি। আবার পাওয়া গেলেও দাম অতিরিক্ত। অনেক ক্রেতাই দাম নিয়ে বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। সুমন মোল্যা নামে এক ক্রেতা শহরের ফলপট্টির সামনে থেকে ভ্যান থেকে বাঙ্গি কিনেছেন ১২০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, সারা দিন রোজা রেখে ইফতারে বাঙ্গিটা খুব উপকার দেয়। পেটটা ঠান্ডা থাকে। কিন্তু ছোট্ট একটা বাঙ্গি ১২০ টাকা দিয়ে কিনে মাথাটা গরম হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমার জেলায় উৎপাদিত পণ্য আমাকেই দিগুণ দামে কিনে খেতে হবে এটা মানতে পারি না। সব জায়গাতেই সিন্ডিকেট, সবখানেই অতি মুনাফা। জানা গেছে, এ অঞ্চলের বাঙ্গি-লালমির স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখান থেকে ফল কিনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। জেলার ভাষানচর ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের লালমি চাষী খালেক ব্যাপারী জানান, তিনি এ বছর এক একর জমিতে লালমি চাষ করেছেন। খরার কারণে ফলন কম হয়েছে। তার আশা, দাম ভালো পেয়ে তিনি ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। আরেক কৃষক ইনসাফ ফকির জানান, গত বছর যে পরিমাণ জমিতে লালমির আবাদ করেছিলেন, সেই পরিমাণ জমিতে এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। তারপর আবার ফলন তেমন একটা ভালো হয়নি। ভালো দাম না পেলে তিনি লোকসানের মুখে পড়বেন। সাভার থেকে আসা পাইকার ব্যবসায়ী রমজান ব্যাপারী জানান, প্রতি বছর রমজান শুরুর দিকে এ এলাকা থেকে বাঙ্গি ও লালমি কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। এ এলাকার লালমি ও বাঙ্গি সুস্বাদু। যে কারণে চাহিদা বেশি। গতবার প্রচুর বাঙ্গি ও লালমি আবাদের পাশাপাশি ভালো ফলন হয়েছিল। এবার ফলন কম। সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৫০০ একর জমিতে লালমি-বাঙ্গির চাষাবাদ হয়েছে। গত বছররের তুলনায় এ বছর আবাদ বেশি হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৩৫ টন ফলন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজারে দাম ভালো থাকলে চাষিদের লোকসানের বোঝা বইতে হবে না বলেও জানান তিনি। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রায় ২০ বছর আগে সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী এলাকায় আলিম খাঁ নামের এক কৃষক প্রথম লালমি চাষ করেন। আলিম খাঁ পরীক্ষাগারে গবেষণা ও সংকরায়ণ করে লালমি উদ্ভাবন করেছিলেন বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। তবে কৃষকদের ধারণা, আলিম খাঁ হয়তো প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়িত এই ফলটির ধরন প্রথম লক্ষ্য করেন এবং এর চাষ করেন। তার সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরাও লালমি চাষে উৎসাহিত হন। ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হারুনুর রশিদ জানান, লালমি বাঙ্গিসদৃশ একটি ফল। ফরিদপুরে উৎপাদিত ১৮টি ফলের মধ্যে আর্থিক বিবেচনায় বাঙ্গি ও লালমির অবস্থান পাঁচ নম্বরে। তিনি বলেন, এই ফল এই এলাকার কৃষকরাই উৎপন্ন করেছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে গবেষণা করে এই ফসলের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে।