স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রিন্ট কার্যক্রম দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে কার্ড ছাপানোর কাজ। তবে ইসির কাছে ১১৪ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) স্মার্টকার্ড ছাপা বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। যদিও বিএমটিএফ জানিয়েছে, কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রিন্ট বন্ধ থাকতে পারে। দ্রুত তা চালু হয়ে যাবে। তবে স্মার্টকার্ড প্রিন্টের জন্য ১০টি মেশিনের বেশিরভাগ কাজ করছে না। যে কারণে মাঝেমধ্যেই বন্ধ রাখতে হচ্ছে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট। ইসি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি ত্রুটির পাশাপাশি স্মার্টকার্ড পার্সোনালাইজেশন বাবদ বকেয়া থাকায় কার্ড ছাপানো বন্ধ আছে। এর আগে বকেয়া পরিশোধ না করায় ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের শুরু থেকে প্রায় এক মাস স্মার্টকার্ড ছাপানো বন্ধ ছিল। বিএমটিএফের সঙ্গে আলোচনায় বকেয়া পূরণ সাপেক্ষে পুনরায় কার্ড ছাপানো চালু করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, মেশিন নষ্ট থাকার কারণে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে স্মার্টকার্ড ছাপানো বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে পুনরায় স্মার্টকার্ড ছাপানো কার্যক্রম শুরু হবে। ইসি সূত্র জানায়, স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করার জন্য ফ্রান্স থেকে ১০টি মেশিন আনা হয়েছিল। সেগুলোর প্রায় সাত বছর বয়স হয়েছে। মেশিনগুলো প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডারে স্থাপন করা হয়। তবে মেশিনগুলোতে মাঝেমধ্যেই সমস্যা হচ্ছে। যদিও আনার সময় এগুলোর মেয়াদকাল ১০ বছর বলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট বন্ধ রয়েছে বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে। স্মার্টকার্ড পার্সোনালাইজেশন বাবদ ১১৪ কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে বলে বিএমটিএফ থেকে জানানো হয়েছে। এই টাকা পরিশোধ নিয়ে ইসি ও বিএমটিএফের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এই বকেয়া টাকা না দেওয়ার কারণেই মূলত এবার স্মার্টকার্ড প্রিন্ট বন্ধ রয়েছে। ২০১৬ সালে প্রথম স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় নাগরিকদের। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ৭ কোটি ১০ লাখের বেশি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রিন্ট করেছে ইসি। শুরুতে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির মাধ্যমে স্মার্টকার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে ইসি। পরে বিএমটিএফের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড পার্সোনালাইজেশন করা হয়। পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) পরিবর্তে দেশের ৯ কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিইএ)’ প্রকল্প হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১১ সালে গৃহীত হওয়ার পর এক যুগে ছয়বার মেয়াদ বেড়েছে প্রকল্পটির। আরও তিন কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দিতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার সময়ও দুই বছর পেরিয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা। যদিও এখন পর্যন্ত কেবল সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।