বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা নয়, আর্থিক সমস্যারও কারণ। শিশুদের ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব মায়ের পেট থেকেই শুরু হয়, স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। দূষণ রোধে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে তরুণদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়েআলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিশিষ্টজন। আমরা কী করতে পারি’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে। সম্পাদক শেখ রোকনের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে তিন বছর সরকার পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছেন। অল্প সময়েই তিনি পরিবেশ রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তারই পথ ধরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কাজ করে চলেছেন। এ জন্য বিশ্ব চিনেছে বাংলাদেশকে।’ তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণ রোধে পরিবর্তন আগে নিজেদের মধ্যে আনতে হবে। যেসব শর্ত মেনে নিয়ে সংস্থাগুলো উন্নয়ন বা নির্মাণ করছে, কাজ শুরুর পর সেসব শর্ত মানছে না। ইটভাটা, কলকারখানা কিংবা ফিটনেসবিহীন যানবাহনের মালিকদের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে কিছুই হবে না। সামান্য টাকা জরিমানা হলে তারা পরিশোধ করে ফের কাজ চালিয়ে যায়। প্যানেল আলোচক হিসেবে ইমেরিটাস অধ্যাপক, পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে ধুলাবালি। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন। এসব স্থাপনা নির্মাণের সময় মানা হচ্ছে না বিধি। ভবন তৈরির সময় সেগুলো কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে দেওয়া বা পানি ছিটিয়ে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও তা যথাযথ মানা হয় না। এসব তদারকের কার্যকরী ব্যবস্থার অভাবও লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ জরুরি। আবার অনেক কলকারখানা আছে, যারা পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্ত মানছে না। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সব নিয়ম মেনেই পণ্য তৈরি করছে। যারা নিয়ম মানছে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য বর্জন করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় কাজ শুরু করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। তাহলেই পরিবর্তন আসবে। স্বাগত বক্তব্যে উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘আমাদের মাটি এবং জলে বিষ মিশে আছে। যানবাহন, ইটভাটা, কলকারখানা থেকে নির্গত বিষ বায়ুতে মিশেছে। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। শিল্পে পিছিয়ে পড়া দেশ হলেও দূষণ প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে আছি। বায়ুদূষণ প্রতিরোধ বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় প্রয়োজন। সরকার এ ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি।’ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু না হলেও ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। বায়ুদূষণের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন দপ্তরের আন্তঃসমন্বয়হীনতাও অনেকাংশে দায়ী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘উন্নয়নের বাইপ্রোডাক্ট বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসজনিত রোগ, মানসিক বিকাশ থেকে শুরু করে মানবদেহের বহুমাত্রিক রোগ ও সমস্যার সৃষ্টি করে।’ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণ সারাবিশ্বে বড় সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পৃথিবীর প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। মাত্র ১০ ভাগের মতো মানুষ বিশুদ্ধ বায়ু পাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের অপারেশন্স অ্যান্ড প্রোগ্রাম কোয়ালিটি সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড গোমেজ বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে ওয়ার্ল্ড ভিশন বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করছে। পাড়া-মহল্লার মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ শিক্ষক মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘ইসলাম পরিবেশ বা প্রকৃতিতে যে কোনো অনাচারকে হারাম ঘোষণা করেছে। বায়ুদূষণ রোধে ইমামদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। সভায় বক্তব্য দেন আরবান ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সজীব মিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা আহমেদ, আহ্ছানউল্লা aবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াদ, শিশু ফোরামের কনক রায় প্রমুখ।