সংসদ সদস্যপদ খারিজের পর বাংলো ছাড়ার নোটিশ পেয়েছেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। দিল্লির ১২, তুঘলক লেনের সরকারি বাংলো ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে গত সোমবার তাঁর কাছে নোটিশ পাঠানো হয়। এর পর দেরি না করে গতকাল মঙ্গলবার চিঠির জবাব দেন রাহুল। লোকসভার সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাকে পাঠানো চিঠিতে ঠিক সময়ে বাড়ি ছাড়বেন জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘বাংলো ছাড়ার নোটিশ পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। গত চার মেয়াদের সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের যে সমর্থন আমি পেয়েছি, সেটাই আমার এখানে বসবাসের সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে। আমার অধিকারের প্রতি পক্ষপাত না করে চিঠিতে থাকা নির্দেশ মেনে নেব।’ ২০০৫ সাল থেকে তুঘলক লেনের বাংলোতে থাকছেন রাহুল। তাঁকে আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে এটি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে গতকাল ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের শহর বেলগাওমে পৌঁছেছেন রাহুল গান্ধী। সেখানে পৌঁছানোর পর খাড়গে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা (বিজেপি) রাহুলকে দুর্বল করার সব চেষ্টা করবে। কিন্তু তিনি বাংলো ছাড়লে তাঁর মায়ের (সোনিয়া গান্ধী) সঙ্গে থাকবেন অথবা আমার কাছে আসতে পারেন।’ এদিকে তৃণমূলসহ ১৭ বিরোধীদলীয় জোটকে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ করেছেন রাহুল গান্ধী। সোমবার সন্ধ্যায় মল্লিকার্জুন খাড়গের দিল্লির বাসভবনে বিরোধী দলের জরুরি বৈঠকে তিনি এই অনুরোধ জানান। ১৭ দলের নেতাদের উদ্দেশে রাহুল বলেন, দরকার হলে আমি সরে যাচ্ছি, কিন্তু কিছুতেই জোট ভাঙবেন না। দেশবাসীর কাছে গিয়ে আদানি-কাণ্ডের কথা তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর যে সুযোগ এসেছে, তা কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। বৈঠকে থাকলেও কোনো কথা বলেননি সোনিয়া গান্ধী। প্রবীণ নেতা এনসিপির শারদ পওয়ার সব বিরোধী দলকে এক ছাতার নিচে থেকে বিজেপিবিরোধী কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা বলেন। তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে ছিলেন দুই সংসদ সদস্য জহর সরকার ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদিকে মানহানির মামলায় ২৩ মার্চ দোষী সাব্যস্ত করে রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পরদিনই তাঁকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। সংসদ সদস্যপদ হারানোর পর ২৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে রাহুলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মোদি পদবি নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন তাঁর জন্য কি তিনি ক্ষমা চাইবেন? এর উত্তরে রাহুল বলেন, ‘আমার পদবি সাভারকর নয় যে, আমি মাথা নত করব। আমি গান্ধী, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি না।’ এই বক্তব্যের জেরে রাহুলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে গতকাল বীর সাভারকরের নাতি রঞ্জিত সাভারকর বলেছেন, ‘ঠাকুরদা ব্রিটিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন– এটা প্রমাণ করে দেখানো হোক। রাহুল যদি এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন।’ রাহুলের এই বক্তব্যে শিবসেনার উদ্বেগ কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার। রাহুলের বক্তব্যে বিচলিত উদ্ভব ঠাকরে। তবে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘আমরা রাহুলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের লড়াই সাভারকারের সঙ্গে নয়, মোদির সঙ্গে।’ এদিকে রাহুল গান্ধীর সাজা এবং সংসদ সদস্যপদ খারিজের ঘটনায় নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সোমবার এ কথা জানিয়েছেন।