‘সংবাদ প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের কষ্টের কথা, দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছিলেন প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান। সংবাদে দিনমুজুর জাকির হোসেনের যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে সেটা শুধু জাকির হোসেনের বক্তব্য নয়। আজ নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে অনেকাংশে উচ্চ আয়ের মানুষেরও বক্তব্য এটি। সেই সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে মামলা দিয়ে কোন প্রকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই তাঁকে আটক করা হয়েছে। এটি অন্যায়, এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। অবিলম্বে শামসুজ্জামানকে হয়রানি বন্ধ করে তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।’ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বক্তারা। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট(বাসদ) দিনাজপুর শাখা ও জেলা সচেতন সমাজের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাসদের দিনাজপুর শাখার আহবায়ক কিবরিয়া হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি জলিল আহমেদ, প্রথম আলো দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক কর্মকর্তা ইমরান আলী, বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শুভ রায়, সদস্য রওনক রহমান, সাংবাদিক কংকন কর্মকার, আব্দুস সাত্তার, মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ভাবনার নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। সকাল সাড়ে এগারোটায় মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে প্রেসক্লাবের সামনে বাসদসহ দিনাজপুরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জড়ো হতে থাকেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদে অংশ নেন। এসময় সাংবাদিক শামসুজ্জামানে মুক্তির দাবিসহ প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের উপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং একইসাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান তারা। বক্তব্য প্রদানকালে জেলা বাসদের আহবায়ক কিবরিয়া হোসাইন বলেন, সাংবাদিক শামসুজ্জামানের প্রকাশিত ফটোকার্ডটিতে সেই অর্থে কোন ভুল নেই। বরং পাঠক যেন বিভ্রান্ত না হন সেজন্য প্রথম আলো মাত্র ১৭মিনিটের মাথায় সেখানে সংশোধনী এনেছে। এখানে বরাবরের মত প্রথম আলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে পাঠকের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে হয়রানীমুলক মামলা দিয়ে রাতের অন্ধকারে আটক করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতার মসনদে থেকে সরকার অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদি হয়ে উঠেছে। একটা ভীতির সংস্কৃতি কায়েম করেছে। তাদের পক্ষে কথা বললে দেশপ্রেমী আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে দেশদ্রোহীতার খাতায় নাম তুলে দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় এনে হয়রানি করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার এখনি সময়।’ বক্তব্যে রওনক রহমান লাবিব বলেন, স্বাধীনতা পাওয়ার ৫২ বছর পরে এসেও কথা বলার স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদে কোন ভুল নেই। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালনাকারীরা এবং তথাকথিত কিছু চাটুকার তোষামোদকারী সংবাদটির ভুল ব্যাখ্যা করে ষড়যন্ত্রের মহোৎসবে মেতেছে। ‘ প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম বলেন, ‘ সংবাদপত্রকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সকল অন্যায় অসংগতি, মানুষের দূর্বোভ ও কষ্টের কথা তুলে ধরাই গণমাধ্যমের কাজ। প্রথম আলো গত ২৪ বছর ধরে নিষ্ঠা-সততা-সাহসিকতার সাথে সেটি প্রচার করে চতুর্থ স্তম্ভের কাজটি করে আসছে। বিগত দিনেও প্রথম আলোর প্রতি এমন অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। প্রথম আলো আইনিভাবে সেসবের মোকাবিলা করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তার ভয় দেখিয়ে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম প্রথম আলোর কণ্ঠরোধ করা যাবেনা।