ইরানে হিজাব আইনে কোনো পরিবর্তন আসছে না; বরং দেশটির সরকার নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথাই বলেছে। দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেন মোহসেনি শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ইরানের এক কট্টরপন্থি এমপি শনিবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগকে নারীদের হিজাব পরার নিয়ম লঙ্ঘন করা বন্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে আলটিমেটাম দিয়েছেন। হোসেইন আলি হাজি দেলিগানি নামে ওই এমপি নারীদের হিজাব পরাকে ‘আল্লাহর আদেশ’ বলে বর্ণনা করে বলেন, যদি বিচার বিভাগ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে ইরানের পার্লামেন্টের সদস্যরা এ বিষয়ে আইনগত শূন্যতা পূরণে একটি বিল উত্থাপন করবেন। ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। নারীরা জনসম্মুখে ঠিকমতো হিজাব পরছেন কিনা তা দেখতে দেশটিতে নৈতিক পুলিশ নামে একটি বাহিনী সক্রিয় আছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে ‘হিজাব ঠিকমতো না পরার’ অভিযোগ তুলে ওই নীতি পুলিশ মাহশা আমিনি নামে ২২ বছরের এক কুর্দি তরুণীকে তেহরানে আটক করেছিল। ওই তরুণী আটকের তিন দিন পর পুলিশের হেফাজতে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগের তিনদিন সে কোমায় ছিল। ওই তরুণীর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, গ্রেপ্তারের সময় নির্যাতনের কারণে মাহশা আমিনি অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যায়। এ নিয়ে পুরো ইরানজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। টানা কয়েক মাস ধরে চলা তীব্র ওই বিক্ষোভ ইরানের ক্ষমতাসীনদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। বিক্ষোভের মুখে ইরান সরকার নৈতিক পুলিশ বিলুপ্ত করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা বাধ্যতামূলক হিজাব আইন প্রত্যাহার এবং সরকার পতনের দাবি জানায়। বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়া ইরান সরকারের পেটোয়া বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। যাতে প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে দাবি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের। গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে জানায়, হিজাব ইস্যুতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এক বিবৃতিতে বলা হয়, হিজাব ইসলামি আইনের একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবেই থাকবে।