আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতাভোগী ১১ লাখ ৪৯ হাজার জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগী ৬ লাখ ৯০ হাজার এবং প্রতিবন্ধী ৫ লাখ ৩৫ হাজার জন বাড়ানো হবে। পাশাপাশি কয়েকটি খাতে ভাতা ও উপবৃত্তির অঙ্কও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির’ বৈঠকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল (আইএমএফ) ঋণের বিপরীতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর শর্ত রয়েছে। এটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বলয় বাড়াতে যাচ্ছে। এছাড়া বর্তমান অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। অসচ্ছল ও নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ সুবিধার আওতায় তাদের নিয়ে আসার চিন্তা করছে অর্থ বিভাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে অসচ্ছল ও নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনী সম্প্রসারণ এবং বরাদ্দ বাড়ানো সময়ের দাবি। এছাড়া নতুন সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এতে প্রকৃত অসহায় ব্যক্তিরা যেন আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সূত্র মতে, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়া সব ধরনের ভাতা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা হয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠকে ভাতাভোগী ও ভাতার অঙ্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সাধারণত প্রতিবছর বাজেটের আগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগ বাজেটে তা অন্তর্ভুক্ত করে। নতুন ভাতাভোগীর মধ্যে বয়স্কভাতার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হচ্ছে। এ সুবিধার আওতায় প্রায় ১১ লাখ ৪৯ হাজার জনকে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে ৫৭ লাখ ১ হাজার জন। নতুন মুখ যুক্ত হলে মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার জনে। পাশাপাশি মাসিক ভাতার হার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করতে বলা হয়। এজন্য আগামী বাজেটে ১ হাজার ৫২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে। চলতি বাজেটে বয়স্ক ভাতা খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ খাতে আগামী বাজেটে ৪ হাজার ৯৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ৬ লাখ ৯০ হাজার জন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাকে ভাতা কার্যক্রমের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা সুবিধা পাচ্ছে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জন। নতুন সংখ্যা যুক্ত হলে সুবিধাভোগীর সংখ্যা হবে ৩১ লাখ ৬৫ হাজার জন। পাশাপাশি এ খাতের ভাতার অঙ্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এজন্য আগামী বাজেটে অতিরিক্ত ৭৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। চলতি বাজেটে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এ খাতে আগামী বাজেটে ২ হাজার ২৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এদিকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চার স্তরে উপবৃত্তি ভাতা চালু করেছে সরকার। আগামী বছরে সর্বস্তরের উপবৃত্তির অঙ্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় মাসিক ভাতা ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ১১০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ১৩০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত ৪৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার দরকার হবে। এ খাতে বর্তমান বরাদ্দ ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে ১৪৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৫ হাজার জন নতুন প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। বর্তমান সারা দেশে ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী সরকারের ভাতা পাচ্ছে। নতুন মুখ যুক্ত হলে মোট প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৯ লাখ জন। এজন্য বাজেটে অতিরিক্ত ৫৪৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে বর্তমান বরাদ্দ ২ হাজার ৪২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগামী বাজেটে ২ হাজার ৯৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বয়স্কভাতা বাড়ানোর প্রস্তাবটি বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। এ খাতে ভাতার অঙ্ক বাড়াতে প্রাথমিকভাবে অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি আছে। এছাড়া বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার আওতায় ১ লাখ নতুন ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় অসচ্ছল ও গরিব মানুষকে ভাতার আওতায় আনার চিন্তা রয়েছে।