জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের দাবি থাকলেও ইসির নতুন সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সোমবার দলটির নেতারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতি ইভিএম তাদের দাবি ছিল। তারা এ দাবি থেকে সরে গেছে, সেটা এখনো বলা যাবে না। তবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবেই তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। ফলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। তবে বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। তাদের মতে, জনগণের আস্থা অর্জন না করে ইভিএম প্রদ্ধতিতে যাওয়া উচিত নয়। সোমবার অনুষ্ঠিত ইসির বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হয়। তারা আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ৩০০ আসনেই কাগজের ব্যালটে ভোট করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা দেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছি। বহু নাগরিক সেবা ও সুবিধা এখন ডিজিটাল। তবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের আছে। আমি এই মাত্র আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা ঘোষণা করেছে যে, ৩০০ আসনেই প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। এ নিয়ে আমাদের দল দলীয়ভাবে আলাপ-আলোচনা করে জানাবে। তবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবেই তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইভিএম কেনা আর মেরামতের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে যে বাজেট চাওয়া হয়েছে, সেটি এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজকের পরিস্থিতিতে এই এক বিলিয়ন ডলার খরচ করার যৌক্তিকতা আছে কি না, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কাজেই তারা যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, সে ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ স্বাধীনভাবে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে আমরা চাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করুক। একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন আওয়ামী লীগের দাবি ছিল। কারণ, আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তিগত পদ্ধতি হলো ইভিএমে ভোট। প্রযুক্তির সঙ্গে, যুগের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এ কারণেই আমাদের এ দাবি ছিল। আমরা আমাদের দাবি থেকে যে সরে এসেছি, সেটাও নয়। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি বলেন, তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই নির্বাচন কমিশন নেবে। দল হিসাবে আমরা আমাদের দাবি করেছিলাম। এটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। জনগণেরও প্রত্যাশা ছিল। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবি যুক্ত ভোটার তালিকা-এসবকিছু শেখ হাসিনার দাবি ছিল। এটা অন্য কেউ আগে করেনি। ইভিএমও আমাদের দাবি ছিল। কারণ, এটা একদিকে নতুন প্রযুক্তি, অন্যদিকে ইভিএমে ভোট কারচুপির আশঙ্কা কম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং আমাদের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে জনগণের দল হিসাবে আওয়ামী লীগ চায় অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ইভিএম থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কারণ, এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল। আমরা বলেছি, জনগণের আস্থা অর্জন না করে ইভিএম প্রদ্ধতিতে যাওয়া উচিত নয়। জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই এটা বিতর্কমুক্ত হওয়া দরকার। জনগণের আস্থা অর্জন করেই এটা করতে হবে। এখন যে কারণেই হোক তারা (নির্বাচন কমিশন) ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। একই বিষয়ে জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বলেছিলাম ইভিএমে এ নির্বাচন করতে হলে ৩০০ আসনেই ব্যবহার করতে হবে। কিছু আসনে ইভিএম আর কিছু আসনে ব্যালটে ভোট করলে দুই ধরনের নির্বাচনিব্যবস্থা হয়ে যাবে। তখন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রশ্ন থেকে যেতে পারে। তবে এখন তারা (নির্বাচন কমিশন) যদি ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট করতে চান, তাহলে আমরা এটিকে স্বাগত জানাব।