মাত্রাতিরিক্ত কৃত্রিম রং ও মসলায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ৪, ২০২৩ | ৫:২০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ইফতারে বাহারি খাবার কার না খেতে ভালো লাগে। কিন্তু মুখরোচক এসব খাবার খেতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছে স্বাস্থ্য। ফুটপাতের দোকান, সাধারণ হোটেল বা কনফেকশনারির ইফতারের নানা পদে বিশেষ করে মাংসের পদে ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম রং। দেখতে ভালো দেখাবে, ক্রেতারা আকৃষ্ট হবে এই আশায় রং ব্যবহারে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। ফুড গ্রেডের কোনো রং ব্যবহার না করে সাধারণ কৃত্রিম রং, যা জর্দার রং হিসাবে পরিচিত তা ব্যবহার হচ্ছে ইচ্ছেমতো। পাশাপাশি মসলার ব্যবহারও হচ্ছে দেদার। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এ ধরনের খাবারে ক্যানসারসহ নানা রোগের মারাত্মক ঝুঁকি আছে। সরেজমিন রাজধানীর চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে চিকেন টিক্কা, শিক কাবাব, জিলাপিসহ নানা পদে খোলাবাজারে পাওয়া কৃত্রিম রং দেদার ব্যবহার হচ্ছে। কাবাব পোড়ানোর স্থানের পাশেই রাখা হয়েছে রং ও মসলামিশ্রিত পাত্র। সেখান থেকে তা বারবার মাংসে ব্যবহার করা হচ্ছে। জিলাপি দোকানের একজন কর্মচারী হাফিজুলকে দেখা গেল, খেয়ালখুশিমতো জিলাপির খামিতে রং মেশাতে। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, এই রংতো আমরা সবসময়ই ব্যবহার করি। একইভাবে কৃত্রিম এসব রং ছোটবড় সব হোটেলের চিকেন গ্রিল তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানীর যে কোনো এলাকার ইফতার বেজারে গেলেই এসব কৃত্রিম রং ব্যবহারের চিত্রটি চোখে পড়ে। বেইলি রোড কিংবা ধানমণ্ডি-মোহাম্মদপুরের ইফতার বাজার-সবখানে মাংসের পদে অতিরিক্ত তেল ও মাসলার ছড়াছড়ি চোখে পড়বে। এসব বিষয়ে ক্রেতাদের অনেকেই খেয়াল করেন না। অনেকে আবার জেনে-বুঝেও বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যান। ধানমন্ডির একটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট থেকে তৈলাক্ত, মসলা ও কৃত্রিম রং দেওয়া খাসির মাংসের পদ কিনছিলেন ইফতেখার হাসিব। তিনি বলেন, আমরা খাবারের জন্য এই বড় রেস্টুরেন্টগুলোর ওপর ভরসা করি। দেখতে পাচ্ছি তারা অনেক তেল, মসলা ও কৃত্রিম রং ব্যবহার করেছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে চাই তারা যেগুলো ব্যবহার করেছে সেগুলো মানসম্মত। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়েট কনসালট্যান্ট ও স্থুলতা ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ সিরাজাম মুনিরা বলেন, প্রথমত খাবারে কৃত্রিম রং ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু তারপরও এই রঙের ব্যবহার করা হয় দেখতে ভালো লাগার জন্য। এতে খাবারের স্বাদ কিন্তু বাড়ে না। পুষ্টিগত দিক থেকে চিন্তা করলেও খাবারে কৃত্রিম রং ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নেই। কিছু খাবারে প্রাকৃতিকভাবেই রং থাকে। সেগুলো যদি দেখতে সুন্দর দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয় সেটি আমরা নিতে পারি। তিনি বলেন, ক্যানসার, পেনক্রিয়াটাইটিস, গলব্লাডারে পাথর, অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, আইবিএসের মতো সমস্যা এই ধরনের অবাঞ্ছিত রং ব্যবহারের মাধ্যমে হতে পারে। শিশুদের ক্ষুধামন্দা, খাবারে অরুচির ক্ষেত্রেও এই ধরনের কৃত্রিম রং দায়ী। যেহেতু এই ধরনের রং তাদের পেটে ঠিকঠাক মতো হজম হয় না সেহেতু পরে তাদের দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ডায়রিয়া, কলেরা হয়ে থাকে। যার কারণে বাচ্চারা পরবর্তী সময়ে হেপাটাইটিসের মতো ভয়ংকর রোগে ভুগতে পারে। এই পুষ্টিবিদ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাজারজাতকরণের জন্য বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনে যে খাবারগুলো রয়েছে যা অনেকদিন ধরে ব্যবহার করার তাগিদ থাকে। সেসব ক্ষেত্রে কিছু কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয় ফুড গ্রেড মেনে। এফডিএ অনুমোদিত সেই ফুড গ্রেডের মধ্যে কিছু কালার আছে সেগুলো আমরা ব্যবহার করতে বলি। বাজারে দেদার বিক্রি হওয়া জর্দার রঙের বিষয়ে তিনি বলেন, জর্দার রং বলে ফুড গ্রেডে কোনো রং নেই। ফুড গ্রেডে যে ধরনের রং ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে একটি কোডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সেই কোডের অধীনে এগুলো বিক্রি করা হয়। এই রংগুলো ব্যবহারের সঠিক মাত্রাও আছে। সে অনুযায়ী ব্যবহার করা হচ্ছে কি না সেটিও দেখতে হবে।