অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব ও পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে দুটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বঙ্গবাজারেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। তাই আগামীতে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এসব নির্দেশনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহমর্মিতাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন প্রমুখ। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক বৈঠকে বেশ সময় ধরে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বেশ আবেগাক্রান্ত হয়ে বলেছেন, ঈদের আগ মুহূর্তে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লেন। তিনি বলেন, কী করা যায়– এমন আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিসকে আরও শক্তিশালী এবং আগুন নেভানোর সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানোর কথা বলেছেন। এ ছাড়া তিনি জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। মন্ত্রী বলেন, এটা দোষারোপের বিষয় নয় যে, ছোট জায়গায় বেশি মানুষ থাকে। ইচ্ছা করে তো থাকে না। তারপরও এ ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা বাড়াতে হবে। এগুলো স্বীকার করেই সরকারকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বৈঠকে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের ফায়ার ফাইটিং যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর শক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে ক্রমেই জলাধার কমে যাচ্ছে। তাই এখন থেকে ভবন তৈরির সময় পাশে যেখান থেকে খুঁড়ে মাটি নেওয়া হয়, সেই গর্ত আর ভরাট করা যাবে না, যাতে ওই গর্তে কিছুটা হলেও একটা জলাধার সৃষ্টি হয়। এম এ মান্নান আরও জানান, ঈদের আগেই এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীকে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্যের দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে জন্য ঈদের আগেই তাঁদের হাতে পণ্য পৌঁছাতে বলেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, নারীরা যেসব কাজ বাড়িতে করেন (গৃহস্থালি) সেসব মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নত কিছু দেশ এটা করে থাকে। এই হিসাব যুক্ত হলে জিডিপি অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক সড়কগুলোতে টোল আদায়ের বিষয়ে মত দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে গ্রামীণ সড়কের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য এলজিইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষি জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন অর্কিড ও টিস্যু কালচার সংরক্ষণ এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেসব সবজি চাষ হচ্ছে, সেগুলো জাতীয় হিসাবে যুক্ত করার নির্দেশ দেন। বিভিন্ন দেশ আমাদের দেশ থেকে সবজি ও ফল আমদানি করতে চাইছে– এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে এনজিওদের কাজে যেসব সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয়, সেখানে সরকারি সংস্থার নামও ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে গবেষণা সংস্থা ও সানেমের পর্যালোচনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, তাদের অর্থায়ন কীভাবে হয়, তা সরকার জানে। যারা টাকা দেয় তাদের মতো করে গবেষণার ফলাফল তৈরি করে। তারা সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাই সিপিডি বা সানেম কি বলল, তাতে সরকারের কিছু যায় আসে না। তাদের হিসাব সরকারের হিসাবের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয়। ১১ প্রকল্প অনুমোদন: বছরব্যাপী ফল উৎপাদনসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৬০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সিএমএইচ এ ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণ, ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা নির্মাণ প্রকল্প। আরও আছে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রজেক্ট, জামালপুর জেলার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন, ওয়াশ সেক্টর স্ট্রেন্থনিং অ্যান্ড স্যানিটেশন (সানমার্কস) ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ, ক্লাইমেট রেজিলেন্ট সাস্টেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ এবং মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং। এ ছাড়া অনুমোদিত হয়েছে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়ক, সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রকল্প।