জ্বালানি ঘাটতি এবং উৎপাদন খরচ বাড়ায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কম হতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার উদ্যোগ এবং ব্যয় সাশ্রয়ের পদক্ষেপও বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা সংস্থাটির। মঙ্গলবার প্রকাশিত এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের এপ্রিল সংস্করণে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থার সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চান হোং। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়ায় রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধিতে ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি জ্বালানির ঘাটতি এবং উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে প্রত্যাশা অনুসারে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কম। এ প্রসঙ্গে এডিমন গিন্টিং বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বেশ কিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে এডিবির সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সংস্থাটি যৌথভাবে কাজ করছে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবশ্যই নতুন নতুন পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট ১০ লাখ ২২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩২ শতাংশের মতো। তার আগের অর্থবছরের তুলনায় বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের বছরে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ১৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা থাকলেও তা কী পরিমাণ কমতে পারে, সেটি বলা হয়নি এডিবির প্রতিবেদনে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। যদিও গত সেপ্টেম্বরে সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছিল, এ প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ছয় মাসের ব্যবধানে সংস্থাটি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমালো। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে ৭.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার । রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য সংকটের কারণে পরে এ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এডিবি বলেছে, চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের ঘরে মূল্যস্ফীতি রাখতে চেয়েছিল সরকার। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে এডিবি মনে করছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে, গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সরকার সাম্প্রতিক প্রতিকূলতা ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিটি সংস্কার কাজেরই স্বল্পকালীন কষ্ট থাকে। তবে দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশীয় নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহ বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশও তৈরি করতে হবে।