পথশিশুর প্রতি ১০ জনের ৮ জনই নির্যাতনের শিকার: জরিপ

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ১০, ২০২৩ | ১০:০৭ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

পথশিশুদের প্রতি দশজনের মধ্যে আটজনই পথচারীদের দ্বারা নির্যাতনের বা হয়রানির শিকার হয়। এমনকি বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাটে বসবাসকারী শিশুরা চরম দারিদ্র্য, অপুষ্টি, রোগ, নিরক্ষরতা ও সহিংসতাসহ নানা বঞ্চনার শিকার। এসব তথ্য উঠে এসেছে \'সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২\' শীর্ষক জরিপে। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই জরিপের প্রতিবেদন সোমবার প্রকাশিত হয়। ঢাকা এবং দেশের আটটি বিভাগের হটস্পটে (যেসব স্থানে পথশিশুর আনাগোনা বেশি) ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ শিশুর কাছে সরাসরি গিয়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে জরিপ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। জরিপে রাস্তা-ঘাটে বসবাসকারী শিশুদের মোট সংখ্যা না থাকলেও ইউনিসেফ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক হতে পারে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, \'প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়গুলো বেদনাদায়ক। এই বিষয়গুলো কেবল আমাদের কাজ করার জায়গাগুলো দেখিয়ে দেয়না, রাস্তায় বসবাস ও কাজ করা শিশুদের জন্য আমাদের সহানুভূতি এবং সহায়তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।\' পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এমপি বলেন, \'প্রতিবেদনে উঠে আসা পথশিশুদের এই বাস্তব চিত্র দেশের পথশিশুদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নীতিমালা প্রণয়ন ও কর্মসূচি গ্রহণে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।\' জরিপে দেখা যায়, এই শিশুদের বেশিরভাগই ছেলে (৮২ শতাংশ) এবং তাদের বেশিরভাগ দারিদ্র্যের কারণে বা কাজের সন্ধানে রাস্তায় আসে। প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ৬ শতাংশ শিশু এতিম অথবা তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা তা তাদের জানা নেই। এমনকি এই শিশুদের প্রতি তিনজনের মধ্যে প্রায় একজন (৩০ শতাংশের বেশি) জীবনের সবচেয়ে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা, যেমন ঘুমানোর জন্য বিছানা এবং নিরাপত্তা ও স্বস্তির জন্য দরজা বন্ধ করে রাখা যায় এমন একটি ঘর থেক বঞ্চিত। তারা পাবলিক বা খোলা জায়গায় থাকে ও ঘুমায়। প্রায় অর্ধেক শিশু মাটিতে ঘুমায় শুধু একটি পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরো বা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৭ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ একা ঘুমায় এবং ১৭ শতাংশ শিশু কয়েকজন একসাথে মিলে ঘুমানোর মাধ্যমে সুরক্ষা ও স্বস্তি খোঁজে। শিশুদের প্রতি সহিংসতার প্রতি তিনটি ঘটনার একটি (৩০ দশমিক ৪ শতাংশ) রাতে তাদের ঘুমের সময় ঘটে থাকে। ১২ বছর বয়সী হাসিব বলেন, \'আমাদের প্রতি লোকজনের বাজে আচরণে আমি অনেক কষ্ট পেতাম– আমরা ঘুমানোর চেষ্টা করলে তারা আমাদের দিকে পানি ছুড়ে মারত। তারা আমাদের অপমানজনক নামে ডাকতো। জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের এক তৃতীয়াংশ শিশু কাজ করার সময় আহত হওয়ার কথা জানায়, আর অর্ধেক শিশু জানায় সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা। কর্মরত শিশুদের প্রায় অর্ধেকই নয় বছর বয়স থেকে কাজ করতে বাধ্য হয়। এসব শিশুর বেশির ভাগই সপ্তাহে এক হাজার টাকা বা ১০ ডলারের কম অর্থের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে। জরিপে দেখা যায়, রাস্তায় থাকা শিশুদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন (৭১ দশমিক ৮ শতাংশ) পড়তে বা লিখতে পারে না, যা জীবনভর তাদের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে রয়ে যায় এবং তাদেরকে নির্মম ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়। জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের অর্ধেকের বেশি জানায়, জরিপের আগে তিন মাসের মধ্যে তারা অসুস্থ হয়েছিল। ওই সময় তারা জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা ও পানিবাহিত রোগে ভোগে। জরিপ থেকে আরও জানা যায়, রাস্তায় থাকা শিশুদের সেবা প্রদান করে এমন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তারা যে সহায়তা পেতে পারে সে সম্পর্কে বেশিরভাগ শিশুই (৭৯ শতাংশ) অবগত ছিল না।