আমদানি কমলেও কাটছে না ডলার সংকট। বাজার সামলাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয় ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের ৯ মাস ১০ দিনে বিক্রির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ কোটি ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আছে। আবার নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানি কমেছে ১০ শতাংশের বেশি। তবে আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ, নতুন বাণিজ্য ঋণ কমে যাওয়া এবং আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না আসায় ডলার সংকট কাটছে না। বিদেশের সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে চলতি অর্থবছরের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ৭৯৫ কোটি ডলারে উঠেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ২২২ কোটি ডলার। এ অবস্থায় কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য রিজার্ভ কমলেও ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে গতকাল ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত বছরের একই দিন যা ছিল ৪৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডলারের দর বাজারভিত্তিক করলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে। তা না করে কৃত্রিমভাবে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক এবং ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিচ্ছেন। আবার প্রবাসী রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার বেচাকেনা করছে। ডলারের দর বাজারভিত্তিক করলে অনিয়ম কমত। আবার আমদানিকারকরা যেন প্রকৃত খরচ বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দর নির্ধারণ করেন, সরকারের দিক থেকে সে বিষয়ে চাপ দেওয়া যেত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন কারণে এখন দেশের মূল্যস্ফীতি এমনিতেই অনেক বেশি। এখন কৃত্রিমভাবে দর নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, কেউ তা জানেন না। তখন আবার ডলার অতি মূল্যায়িত হতে পারে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে ১০৭ টাকা এবং রপ্তানি আয়ে ১০৫ টাকা দর নির্ধারণ করেছে। ধীরে ধীরে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের অভিন্ন দর ঠিক করা হবে। তখন এক দরের সঙ্গে আরেক দরের ব্যবধান কমবে। এসবের পাশাপাশি অবৈধ পথে ডলারের চাহিদা কমাতে হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সাধারণত সরকারের জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানিতে ডলার দেওয়া হয়। ইডিএফের আকার নেমেছে ৫২০ কোটি ডলারে : নিট রিজার্ভের পতন ঠেকাতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার দ্রুত কমাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনা শুরুর পর দফায় দফায় ইডিএফের আকার বাড়ানো হয়। কিছুদিন আগেও ৭ বিলিয়ন ডলারে থাকা ইডিএফ এরই মধ্যে ৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন বা ৫২০ কোটি ডলারে নামানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রাহক থেকে আদায় হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা সমন্বয় দেখানো হচ্ছে। নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যথাসময়ে ফেরত না দিলে দণ্ড সুদের বিধান করা হয়েছে। আবার ইডিএফ থেকে একক প্রতিষ্ঠানের ঋণসীমা সব পর্যায়ে ৫০ লাখ ডলার কমানো হয়েছে। নানা কড়াকড়ির পাশাপাশি ইডিএফের আদলে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে যেন সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্যই এমন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, বাংলাদেশ বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব করে তা আইএমএফের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সংস্থাটির ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত রিজার্ভের হিসাব আন্তর্জাতিকভাবে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। আর এ জন্য ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ রিজার্ভে দেখানো যাবে না। সব কিছু বাদ দিয়ে আগামী জুনে নিট রিজার্ভ হতে হবে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩২ এবং ডিসেম্বরে হতে হবে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।