ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সব সময় বড় স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি সফল হয়েছেন। সেই পথ খুব সহজ ছিল না। রাষ্ট্র, সমাজ, সংগঠন, ব্যাক্তিসহ বিভিন্নভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু তার চিন্তার মূল জায়গা ছিল জনস্বার্থ। তাই শেষ পর্যন্ত কোনো বাধাই জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তার চিন্তাজুড়ে ছিল গণমানুষের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টাটুকু জারি রাখা। শনিবার সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে ভার্চুয়ালি এক বিশেষ আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। এই আলোচনার আয়োজন করে রিডিং ক্লাব স্ট্রাস্ট। রিডিং ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ ইন্টেলেকচুয়ালদের ফ্ল্যাটফরম। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ‘স্বপ্ন, সাধনা ও রাজনীতি’ শীর্ষক এ ওয়েবিনার আলোচনায় বক্তব্য রাখেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, প্ল্যানিং এডিটর ফারুক ওয়াসিফ, ব্র্যাকের জেন্ডার কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন লিগ্যাল ইস্যুর নির্বাহী সম্পাদক ও রিডিং ক্লাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান রাশেদ রাহম। অনুষ্ঠানে বক্তারা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, জীবন, কর্ম, রাজনৈতিক চিন্তা সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেন। জোনায়েদ সাকী তার বক্তব্যে বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সবচেয়ে বড় গুণ একাগ্রতা। একজন মানুষ কীভাবে তার চিন্তা এবং কাজের সঙ্গে একাকার থাকতে পারেন তাকে দেখে বোঝা যায়। তিনি নিজের চিন্তা আর কাজ এই দুয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা রাখার চেষ্টা করতেন।’ ফারুক ওয়াসিফ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আর্দশের মূলে ছিল মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা। যার জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। মুক্তবাজার ধারণার মতো তিনি সবসময় চিন্তার যৌক্তিকতাকে যাচাই করতে সচেষ্ট ছিলেন।’ ডা. জাফরুল্লাহ আজন্ম মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন উল্লেখ করে নবনীতা চৌধুরী বলেন, ‘নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে একজন নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করে গেছেন ডা. জাফরুল্লাহ। নারীকে প্রথাবিরোধী পেশায় যুক্ত করা, ঔষধ নীতি প্রণয়ন প্রভৃতি কাজ তাকে আমাদের মাঝে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে।’ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এর ভাষ্য, ‘একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ে ডা. জাফরুল্লাহ দেশকে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন ৷ স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য নিয়ে তার নানাবিধ উদ্যোগ এই অনুভবের ফসল। মানুষের মঙ্গলের জন্য একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চিন্তা তাকে সবসময় তাড়িত করতো।’ ফরহাদ মজহার তার বক্তৃতায় বলেন, ‘সমাজের জীবন্ত আর বাস্তব সমস্যা সমাধানের ভেতরেই বুদ্ধিজীবিতার প্রবণতা নিহিত। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সমাজের বিদ্যমান সমস্যা এবং সমাধানের কার্যকর উপায় সন্ধান করেছেন।’