পাহাড়ে কমছে পর্যটক

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ১৬, ২০২৩ | ৫:১২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সাজেক, নীলগিরি, আলী কদমে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় মেঘ। রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ যেন খেলায় মেতে থাকে দুই পাহাড়ের মাঝে। মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক কিংবা তমাতুঙ্গীর সৌন্দর্যও ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়ে। এর সঙ্গে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। জীবনের এই রূপ ও প্রকৃতির রং উপভোগ করতে প্রতিবছর লাখো পর্যটক আসেন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। কিন্তু এবার এতে হয়েছে ছন্দপতন। পাহাড়ে এখন বিরাজ করছে আতঙ্ক। দেওয়া হচ্ছে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা। এতে কমছে পর্যটক। কমছে এই খাতে আয়ও। বান্দরবানে দু’পক্ষের সংঘর্ষে সর্বশেষ নিহত হয়েছেন আটজন। রাঙামাটি সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, বান্দরবানে জঙ্গি অভিযানের কারণে কয়েকটি উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পর্যটক কিছুটা কমে গেছে। রাঙামাটিতে তেমন কোনো ঘটনা না ঘটলেও প্রভাব আছে পর্যটন খাতে। গত ১৫ মার্চ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘থানচি, রুমা এবং রোয়াংছড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভ্রমণনিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে এসব উপজেলা।’ নিষেধাজ্ঞার সময় ওই তিন উপজেলায় মূলত জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তার পরও রোয়াংছড়িতে ঠেকানো যায়নি রক্তপাত। জেলা প্রশাসনের গত ১৫ মার্চের গণবিজ্ঞপ্তিতে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় এ মূহূর্তে ভ্রমণ না করতে সতর্ক করা হয়েছে বিদেশি পর্যটকদেরও। এর আগেও কয়েক দফা এসেছে এমন নিষেধাজ্ঞা। গত ১১ ডিসেম্বর থানচি, রুমা ও বোয়াংছড়িতে অনির্দিষ্টকালের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর থেকে শুধু থানচির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু থানচি উপজেলায় ফের ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় ১১ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে অক্টোবর মাসেও ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা জারি করে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, বান্দরবান সেনানিবাসের রিজিয়ন কমান্ডার, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বান্দরবান সেক্টরের বিজিবির সেক্টর কমান্ডারসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসেবে বিষয়টি সবাইকে অবহিত করা হচ্ছে। কেন এমন নিষেধাজ্ঞা পাহাড়ে একের পর এক ঘটছে সহিংসতা। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বিদ্রোহীরা দেশের পাহাড়ি এলাকার একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন করার তৎপরতায় লিপ্ত বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। বিদ্রোহী গ্রুপের সহায়তায় পাহাড়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে এর আগে র‍্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। র‍্যাব ও পুলিশ পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৫ জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। খালি থাকছে হোটেল-মোটেল রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি সত্রং চাকমা জানান, রাঙামাটি শহরে ৫৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। বছর পাঁচেক আগেও পর্যটকে ভরপুর থাকত রাঙামাটি। করোনা বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে পাহাড়ের পর্যটন খাতে। তখন থেকেই কমেছে এ খাতের আয়। আগে সব হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে যেত। কিন্তু পর্যটক কমার কারণে হোটেল-মোটেলগুলো ফাঁকা থাকছে। বিভিন্ন উপজেলায় রক্তপাত নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাঙামাটি আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আগের তুলনায় পাহাড়ে পর্যটক অনেক কম। বান্দরবান-খাগড়াছড়িতেও নেই প্রত্যাশিত পর্যটক। কমে গেছে এ খাতের আয়ও। পাহাড়ে অস্থিরতা কমে গেলে এবং পর্যটন খাত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হলে আবার ফিরতে পারে সুদিন। বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গা জানান, সাতটি উপজেলার মধ্যে তিনটিতে বারবার ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা দেওয়া হ‌চ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সব উপজেলাতেই। রোয়াংছড়িতে আটজনের প্রাণহানির পর স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি।