ঈদের পর পণ্যের দামে উত্তাপ, ৩০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে চিনি

প্রকাশিতঃ এপ্রিল ৩০, ২০২৩ | ৯:৫৫ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ঈদের পর নিত্যপণ্যের দামে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে ফের চিনির সংকট হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে সরকার প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা। পাশাপাশি সরবরাহ কমার অযুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়ানো হয়েছে। তদারকি না থাকায় আবারও ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মাছ কিনতে ভোক্তার বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে বাজারে এসে দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতা। রোববার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগনর কাঁচাকাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। চিনির বাজারে নৈরাজ্য ঠেকাতে সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল প্রতিকেজি খোলা চিনি ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু ওই দামে বাজারে চিনি বিক্রি হয়নি। খোলা চিনি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। আর ঈদের পর থকে প্রতিকেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট চিনিতো বাজার থেকে এক প্রকার উধাও হয়ে গেছে। মালিবাগ কাঁচাবাজারে কথা হয় ক্রেতা লাইজু বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চিনি নিয়ে কি শুরু হয়েছে? কয়েক মাস ধরে দাম শুধু বাড়ানো হচ্ছে। সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও সেই দামে কখনও বাজারে কিনতে পারিনি। এবার আরেক দফা দাম বাড়ায় ১৩০ টাকায় খোলা চিনি কিনতে হচ্ছে।’ এই বাজারের মুদি দোকানদার মো. সোহেল বলেন, ‘ঈদের আগ থেকেই পরিবেশকরা চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যে পরিমান অর্ডার দিচ্ছি সে পরিমানে চিনি সরবরাহ করছে না। আবার দামও রাখছে বেশি। বেশির ভাগ দোকানে যে চিনি বিক্রি হচ্ছে তা ঈদের আগে কেনা। এছাড়া বর্তমানে চিনির অর্ডার করা হলে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের অন্যান্য পণ্য বাধ্যতামূলক ভাবে কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে।’ রোজায় ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নয়াবাজারের এক মুরগি বিক্রেতা জানান, বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। রাতে তারা কাপ্তান বাজারে মুরগির দাম এসএমএস’এ ঠিক করে দিচ্ছে। সে দামে সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে। এ চিত্র খোদ তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রমান মিলেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বরং ঈদের পর তদারকি না থাকায় অসাধু সেই চক্র আবার ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়িছে। এতে একদিকে ক্রেতার বাড়তি টাকা ব্যয় করছে, অন্যদিকে প্রান্তিক খামাড়ি লোকশানের মুখে পড়ছে। রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ক্রেতা উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও কমেনি সবজির দাম। উল্টো সরবরাহ কমার অজুহাতে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আলু ও পেঁয়াজের দাম ৫-১০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪৫-৫০ টাকা। আর প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০-৯০ টাকা, করলা ৬০-৬৫ টাকা, ঝিঙা-পটল ও চিচিঙ্গা ৫০-৭০ টাকা, টমেটো ৪৫-৫০ টাকা, পেঁপে ৫৫-৬০ টাকা, গাজর ৮০-১২০ ও কচুর লতি ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ ও কলার থোর ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শান্তিনগর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আজমল আলী বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর কারণে বেশি দামে এনে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস এখন ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা ঈদের আগে বিক্রি হয় ৭৫০ টাকা। রোজার আগে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা। সেক্ষেত্রে কেজিতে ১০০টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপন্য কিনতে আসা আল আমিন বলেন, ‘রোজায় এক ধাপে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রেতারা বিক্রি করেছে। ঈদে বাড়ানো হয় আরেক দফা। আর ঈদের পর ফের কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই নৈরাজ্য দেখার যেনো কেউ নেই। বাজারে আসলে দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে বাড়ি যাওয়া ছাড়া আমাদের মতো ক্রেতার আর কোন উপায় নেই।’ রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঈদের পর থেকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা একাধিক বাজারে অভিযান পরিচালনা করছেন। চিনির বাজারে বিশেষভাবে তদারকি করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।