দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে দেশের ছয় জেলায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) সকালে মোখা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এখনো উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে আশঙ্কা করছি, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আঘাত হানবে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, ভোলা বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।’ শনিবার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। এ সময় সাংবাদিকরা প্রতিমন্ত্রীর কাছে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা নিয়ে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, টেকনাফ ও কক্সবাজারের জন্য সুনির্দিষ্ট করে দুই থেকে তিন মিটার উচ্চতার (১ মিটার সমান ৩.২৮ ফুট) জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা ও ভোলার জন্য দুই মিটারের কম উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তিন মিটারের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজনের জন্য একটি আশঙ্কা থেকে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত যে দূরত্ব আছে, আগামীকাল (রোববার) সকাল থেকেই উপকূল স্পর্শ করতে থাকবে। তিনি বলেন, ‘এটির অবস্থান, গতিপথ ও গতি বিবেচনা করে আমরা স্থির করেছি, কক্সবাজার বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার জন্য। আর চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি রাখা হবে। মোংলায় ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকবে।’ মোখার আঘাতে ভূমিধসের আশঙ্কার কথা জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। তবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড কাজ করছে। এখন বাতাসের যে গতিবেগ ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার, এটা বেড়ে হয়তো ১৮০ কিলোমিটার হতে পারে। এর বেশি হওয়ার শঙ্কা নেই। যে কারণে মোখাকে সুপার সাইক্লোন বলা যাবে না।’ এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে- উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।