জাতীয় নির্বাচনকে প্রচারণা উৎসবের হৈ-হুল্লোড় শেষে রোববার ভোটের মাঠে গোটা থাইল্যান্ড। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকেই দেশটির ৭৭টি প্রদেশের ৯৫ হাজার বুথে শুরু হয়ে গেছে ভোটগ্রহণ। ভোটারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ২০ লাখ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে থাইল্যান্ডে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাল্লায় এক দিকে রয়েছেন পরিবারতন্ত্রের পেতংটান সিনাওয়াত্রা (৩৬)। ফিউ থাই পার্টি। অন্যদিকে সামরিক জান্তা প্রধান প্রয়ুত-চান-ও-চা (৬৯)। ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টি। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বিই মুখে মুখে আলোচনার খোরাক হলেও ছায়ার মতো নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবির্ভাব হয়েছে তৃতীয় আরেক শক্তির। পিটা লিমজারোয়েনরাত। মুভ ফরওয়ার্ড নেতা। যুবসমাজ পরিচালিত গণতন্ত্রপন্থি একটি দল। ৪২ বছর বয়সি পিটা একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। কিশোর বয়সে নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনার সময়ই রাজনীতির প্রতি তার ভালোবাসা জন্ম। আলোচিত দলগুলোর বাইরে পরিবর্তনের জন্য একটি দৃঢ় কণ্ঠস্বরে নিজের অবস্থান গড়েছে পিটার দল। আসন্ন নির্বাচনে তরুণ সমর্থকদের নিজেদের শক্তি হিসাবে মনে করছেন। সামরিক বাহিনী এবং পরিবারতন্ত্রের চাকায় পিষ্ট থ্যাইল্যান্ডের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থায় এবার বিরক্ত হয়ে উঠেছেন নবীনরা। জমাটবদ্ধ সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকেই তরুণ থাইদের বড় সমর্থন পাচ্ছে পিটার মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি। যুবকদের সঙ্গে মিশে গেছেন ৪২ বছরের পিটারও। নির্বাচনের সব প্রচারণাতেই তরুণদের ভিড়ে মিশে গেছেন পিটার। সমাবেশে গিয়ে সেলফি তোলেন উৎসুক সমর্থকদের সঙ্গে। উচ্ছ্বসিত হাস্যোজ্জ্বল পিটারকে নিয়ে সমর্থকদের টিকটক তার অবস্থানকে জোরালো করে। পিটারের নির্বাচনি ইশতেহারে পলাতক সামরিক জেনারেলদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। পিটারের এ অঙ্গীকার ২০০৬-২০১৪ সালে দুটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে বেঁচে থাকা তরুণদের অনুরণিত করে। থাই অর্থনীতিতে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারকারীদের ভাঙন ও সংস্কারেরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পিটা। এ ছাড়াও থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কঠোর আইন লেসে ম্যাজেস্ট সংস্কার করারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। জোর গলায় পিটারের দাবি মুভ ফরওয়ার্ডই একমাত্র দল যারা আইনের সংস্কারে কাজ করবে যা রক্ষণশীল দলগুলো তীব্র বিরোধিতা করে। দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটনখ্যাত এ দেশ থাইল্যান্ডের জটিল রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। ১৯৩২ সালে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা থ্যাইল্যান্ডে ১২টির বেশি অভ্যুত্থান ঘটেছে। সময়ের বেড়াজালে দেশটিকে ২০টি ভিন্ন সাংবিধানিক চক্রের মধ্যে যেতে হয়েছে। সংসদে ৫০০টি আসন আগামী চার বছরে বরাদ্দ থাকবে। ৬৩ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী সংখ্যা যাদের মধ্যে ৪৩টি দল মনোনীত। সর্বশেষে ৪টি দল নির্বাচনের লড়াইয়ে যোগ দেন। প্রচার মাঠে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার ভাতিজি পেতংটান সিনাওয়াত্রা। জয় এবার তার ঝুলিতেই।