ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ফলে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। গ্যাস সংকটে শনিবার দিনভর বাসিন্দাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। গ্যাসচালিত চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকায় শনিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে ঘন ঘন লোডশেডিং হয়েছে। রাজধানীর সিএনজি স্টেশন ও বাসাবাড়িতেও ছিল গ্যাসের সংকট। সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের জন্য গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গেছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতাও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিরাপদ থাকতে যা যা করা যেতে পারে- ১. আগামী দুদিনের জন্য আজ দুপুরের মধ্যে খাবার রান্না করুন। ২. জিপ ব্যাগ বা মজবুত পলি ব্যাগে পানি রাখুন এবং বরফ তৈরি করতে ডিপ ফ্রিজারে সংরক্ষণ করুন। দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকলে, এই বরফ ব্যাগগুলো কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজারের তাপমাত্রা কম রাখতে সাহায্য করবে। ৩. নিশ্চিত করুন যে আপনার সমস্ত চার্জার লাইট সম্পূর্ণরূপে চার্জ করা আছে। আপনার আইপিএস থাকলে, ব্যাটারির পানির স্তর পরীক্ষা করে নিন। ৪. কিছু মোমবাতি ও একটি লাইটার কিনে রাখুন। ৫. আপনার ভবনের সুপারভাইজারকে জেনারেটরের জন্য ডিজেল সংরক্ষণ করতে বলুন। ৬. আপনার গাড়ির ট্যাঙ্ক পেট্রোল/সিএনজি দিয়ে পূর্ণ রাখুন। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। অভিযোগ জানিয়ে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও দেন। এদিন ঢাকায় সরকারি অফিস বন্ধ থাকার পরও ২-৩ ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সিএনজি স্টেশন ও বাসাবাড়িতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের জন্য গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গেছে। সিএনজি স্টেশনের কর্মীরা জানিয়েছেন গ্যাসের চাপ কম থাকায় গাড়িতে দ্রুত গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে দীর্ঘ লাইন জমে যায়। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোখার প্রভাবে চট্টগ্রাম, মেগনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অতিদ্রুত গ্যাস, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে। একইসঙ্গে তিনি বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তার স্পর্শ না করে নিকটস্থ বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার জন্য গ্রাহকদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটে ভোগান্তি : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গ্যাস সংকটে সেখানে শনিবার দিনভর বাসিন্দাদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেক বাসা-বাড়িতে গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলেনি। পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। সকালের দিকে নগরীর সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর সামনে দেখা যায় গাড়ির দীর্ঘ সারি। গ্যাস নিতে না পেরে অনেকে গাড়ি বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। এ কারণে দেখা দেয় গণপরিবহণ সংকট। শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীসহ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। কেজিডিসিএল’র উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিউল আজম খান বলেন, চট্টগ্রাম পুরোপুরি এলএনজি’র ওপর নির্ভরশীল। দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামে একেবারেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এলএএনজি টার্মিনালের পরিবর্তে অন্য কোনো উৎস থেকে বিকল্প সরবরাহও নেই। বর্তমানে পাইপলাইনে যে গ্যাস আছে তা থেকে কিছু গ্রাহক পাচ্ছেন, কিছু পাচ্ছেন না। তবে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কী করা হবে এখনো ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়নি। এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকলে গ্যাস সংকট হবেই। নগরীর তিন নম্বর রুটের একাধিক হিউম্যান হলার চালক জানান, সকালে ফিলিং স্টেশনে গিয়ে তারা গ্যাস পাননি। তাই এই রুটের অর্ধেক গাড়ি চলেনি। এদিকে গাড়ি কম থাকায় অনেক চালক যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছেন বলে বেশ কজন যাত্রী অভিযোগ করেন। নগরীর কাজীরদেউড়ি, আসকার দীঘি, চকবাজার, মুরাদপুরসহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানান, সকালে লাইনে গ্যাস ছিল না। এজন্য চুলা জ্বলেনি। রান্নাও হয়নি। তবে দুপুরের পর থেকে এসব এলকায় গ্যাসের চাপ বাড়তে শুরু করে।