উপকূলে মোখা : প্রস্তুতি সত্ত্বেও আতঙ্কে কাঁপছে মানুষ

প্রকাশিতঃ মে ১৪, ২০২৩ | ৫:২০ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

উপকূরের মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে কাঁপছে। অন্যদিকে উপকূলের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এর প্রভাবে শনিবার দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। রোববাও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে রোববার (১৪ মে) সকাল ১১টায় আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আজিজুর রহমান সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান জানান, ‘মোখা’র মূল আঘাত মিয়ানমারে, বাংলাদেশে ঝুঁকি কমেছে। তবে টেকনাফের মিয়ানমারের সিটওয়ায় মূল আঘাত হানতে পারে মোখা। বাংলাদেশে ঝুঁকি কম থাকলেও টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে এর প্রভাব পড়বে। বিকেলের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ অংশ অতিক্রম করার পর এটি দুর্বল হতে পারে। রোববার সকালে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে ঝড়ের অগ্রভাগ। বিকেল অথবা সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে । এদিকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি এবং কক্সবাজার উপকূলে এই ঝড় আছড়ে পড়বে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করার পর থেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। শনিবার সকাল থেকেই সাগর তীরের মানুষদের নিরাপদ জায়গা হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যেতে দেখা যায়। মহেশখালীর সোনাদিয়া, ঘড়িভাঙ্গা, সদরের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, টেকনাফের সেন্টমার্টিন এলাকার অনেকে গবাদিপশু ও শিশুসন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন। কক্সবাজার অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অনুমান করা যায় রোববার ভোর থেকে দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানবে। এ সময় ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে।’ এ রিপোর্ট লেখার সময় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ৭৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল বলে তিনি জানান। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূল অতিক্রম করার সময় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে পারে, সংশ্লিষ্টদের এমন সতর্কতা জারির পর আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে বাঁচতে কক্সবাজার সৈকত বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া শামসুল আলম বলেন, ‘আমি নাজিরারটেক এলাকায় থাকি। ট্রলারে কাজ করি। আমাদের ঘরগুলো সাগর তীরে। যেকোনো সময় পানিতে ডুবে যেতে পারে। এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল তাই প্রাণ বাঁচাতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আগে থেকে চলে এসেছি। আল্লাহ জানে এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কি হয়।’ জহুরা বেগম নামে সাগর তীরের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি শুঁটকি পল্লীতে কাজ করি। স্বামী অসুস্থ, সে তো চলাফেরাও করতে পারে না। পরিবার নিয়ে প্রাণের ভয়ে ছুটে এসেছি। রাত কিভাবে কাটবে জানি না। খাবারের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন এসে কিছু শুকনা খাবার দিয়ে গেল। সবার কাছে দোয়া চাইছি।’ প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মকবুল হাসান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা যে গতিতে আসছে শুনেছি তাতে বাড়িতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। আমার বাড়ি খুব নাজুক অবস্থা। তাই বাড়ির মায়া ত্যাগ করে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে দুপুরে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। ঘূর্ণিঝড় শান্ত হলে চলে যাব।’