করজাল বাড়াতে আগামী বাজেটে সব পৌরসভায় ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি বিক্রি করতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এতদিন শুধু সিটি করপোরেশন, জেলা সদরের পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয়, হস্তান্তর, বায়নানামা ও আমমোক্তারনামার ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা ছিল। করজাল বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে ৩৮টি সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণ করতে রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এর সঙ্গে আরও ছয়টি সেবা যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসাবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্ত হতে; জমি, ভবন এবং অ্যাপার্টমেন্ট লিজ রেজিস্ট্রিকালে; সব পৌরসভায় ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি বিক্রি হস্তান্তর বা লিজ রেজিস্ট্রি করতে; ট্রাস্ট, ফান্ড, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা এবং সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে; সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণকালে বাড়ির মালিকের; কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর রিটার্ন জমার স্লিপ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ আগামী বছর থেকে সরকারি-বেসরকারি ৪৪টি সেবা পেতে রিটার্ন জমা দিতেই হবে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি ৩৮ ধরনের সেবা পেতে টিআইএনের (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) পরিবর্তে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করায় ভালো সুফল পাওয়া গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে রিটার্ন জমা পড়েছিল ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ২১৫টি, সেখানে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৬ জন রিটার্ন জমা দিয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে সাত লাখের বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে। কর দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাই আগামী বাজেটে এর ক্ষেত্র বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যেসব সেবার গ্রহণে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নিতে; সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিতে; বিমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হতে; ১০ লাখ টাকা বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাটের দলিল করতে; ক্রেডিট কার্ড নিতে; পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নিতে; ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পেতে; গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে; ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করতে; কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে; অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে; ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে; ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে; নির্বাচনে অংশ নিতে; সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে; এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ করলে; গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস নবায়নকালে; পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক।