বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি রাজনৈতিক দলসহ সবার জন্য রয়েছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এর সঙ্গে কূটনীতি, রাজনীতি এবং অর্থনীতিসহ অনেক বিষয় জড়িত। বাংলাদেশকে চাপে ফেলতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত। তবে এটি এককভাবে কোনো দল নয়-দেশের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলের আচরণেও প্রভাব ফেলবে। তবে সামগ্রিকভাবেই যা দেশের জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ নির্বাচন ইস্যুতে এই পদক্ষেপ বিশ্বে বিরল। এছাড়া এই ঘটনা বাণিজ্যিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেললে তা সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের নেই। আর এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা দায়ী। সঙ্গে আলাপকালে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ এবং অর্থনীতিবিদরা এসব মন্তব্য করেন। তাদের মতে, বিশ্বের অনেক দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্রও নেই। কিন্তু ওই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক। এছাড়া এবার একতরফা নির্বাচন হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু কোনো দলের খুব বেশি খুশি হওয়ার কারণ নেই। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের ভিসা দেবে না দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে-ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চাকে সহিংসতার মাধ্যমে বাধাদান। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন বৃহস্পতিবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলসহ আমাদের সবার জন্য একটি বার্তা। তাদের এ ধরনের বার্তায় আমরা অবাক হয়েছি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে এক ধরনের চাপে ফেলা। এর পেছনে বড় কারণ আমাদের সব রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা। যেজন্য আজ আমরা এই পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি। এটিই হলো আমার কাছে খারাপ লাগা কিংবা উদ্বেগের জায়গা। তিনি বলেন ‘আমরা বুঝতে পারছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি টেনশন বিরাজ করছে। তবে কতগুলো জায়গা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে অর্থনীতি অন্যতম। তিনি বলেন, সত্যি কথা বললে পৃথিবীর অনেক দেশ এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেই। এর মধ্যে কিছু দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্রও নেই। কিন্তু ওইসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আছে। ওইসব দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, ভিসা বাতিলের যে কথা বলেছে, এটা একক কোনো দল বা সরকারকে বলেনি। সবার জন্যই প্রযোজ্য। এখানে সরকার, যে কোনো রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তাদের পরিবারকেও রেখেছে। তার মতে, এত বড় পরিধি রেখে একটি সিদ্ধান্ত নিল এবং তারা এটা (অপরাধী) কীভাবে নির্ধারণ করবে, সেটি আমার কাছে পরিষ্কার নয়। তার মতে, এখানে ভিসা বাতিল বড় ব্যাপার নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত আসাটা অবশ্যই একটা চাপ। আমাদের যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে যাচ্ছে, তারাও একটা চিন্তার মধ্যে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘অবশ্যই একটি বিষয় তো বোঝা যাচ্ছে যে, এবার একতরফাভাবে নির্বাচন করে ফেলার মতো পরিস্থিতি হয়তো থাকবে না। পাশাপাশি আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। তারা আগের পরিস্থিতিতে নেই। অর্থাৎ ২০১৮ সাল এবং এখনকার মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা প্রভাব আছে। সে কারণে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ সেখানে বাড়ি-গাড়ি করেছে। তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়াশোনা করছে। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সবার ওপরে একটি চাপ। এটি ভাবার বিষয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা আমি এর আগে কখনো শুনিনি। এছাড়া অন্য দেশগুলো থেকেও এসব ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। ফলে বিষয়টি একটু কঠিনই মনে হচ্ছে। ড. আমেনা মহসিন আরও বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমরা ব্যাপক হারে একটি বিষয় দেখেছি। ফলে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের চিহ্নিত করার মাপকাঠি কী সেটি একটি প্রশ্ন। তিনি বলেন, এখানে দুটি বিষয় আছে। একটি হলো-ঢালাওভাবে একতরফা নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে, মানুষ ভোটের অধিকারই পাচ্ছে না। দ্বিতীয় বিষয় হলো নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া। তবে স্বচ্ছ হওয়া অনেক প্রক্রিয়ার ব্যাপার। অনেক আগে থেকেই তা আরম্ভ হয়। এটি শুধু ভোটের দিনের বিষয় নয়। তিনি বলেন, আমরা যেদিন ভোট দিচ্ছি, তার আগে-পিছেও অনেক ভয়ভীতি কাজ করে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকে ফোকাস করার চেয়ে প্রক্রিয়াকে ফোকাস করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পর সরকারি দল বলছে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিরোধী দলও এটাই চায়। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত, আমরাও ইতিবাচকভাবে দেখছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা আছে, স্বাধীনতার অর্থ হলো আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। তাই এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। একই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশিত শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। যেখানে নিশ্চিত হবে সুশাসন। এর ফলে যে আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি সার্থক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলছে, তা অন্যায় প্রতিরোধমূলক। অর্থাৎ অন্যায় প্রতিরোধে সহায়তা করবে। আর কেউ অন্যায় না করলে, সেগুলো প্রয়োগ হবে না। তিনি আরও বলেন, যেসব অপরাধের ব্যাপারে পদক্ষেপের কথা বলছে, বাংলাদেশে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনি আচরণ বিধিতেও সেগুলো অপরাধ। ফলে নির্বাচনি অপরাধ ঠেকাতেই এই উদ্যোগ। এতে নেতিবাচকভাবে দেখার কারণ নেই। এত বিশাল মানুষের মধ্যে নির্বাচনে অপরাধীদের কীভাবে চিহ্নিত করা হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অনেক কিছুর জন্য গভীরে যেতে হয় না। এগুলো দেখলেই বোঝা যায়। যেমন নির্বাচনে কারা বাড়াবাড়ি করছে, কারা সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে এবং মানুষকে ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে, এটি তো দেখাই যায়। সবাই জানে। এখন মূলত আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্যদের আচরণ যেন নিরপেক্ষ হয়, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরেক প্রশ্নের উত্তরে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেকের ছেলেমেয়েরা আমেরিকাতে আছে। তাদের ওপরও প্রভাব পড়বে। বাবা-মা অপরাধ করলে সন্তানকে কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়। অপরাধ বন্ধ করা। ফলে অপরাধ না করলে, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কথা হলো-আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষ, যারা নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, পেছনে তারা অন্যায় কাজ করেছে। প্রশ্ন ছিল, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সরকারও এ ব্যাপারে ছাড় দিতে রাজি নয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ কীভাবে কাজ করবে। উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যদি তাদের নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, যদি সহিংসতা বা তাদের ওপর আক্রমণ না হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ার পথ সুগম হবে। এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তাদের নতুন নীতি আমলে নেবেন কি না, সেটি আপনার বিষয়। তবে আমলে না নিলে বেশকিছু ঝুঁকি নিতে হবে। তিনি বলেন, যে কোনো বিচারে বা যে স্তরে মূল্যায়ন করা হোক, দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এর মধ্যে অন্যতম কূটনৈতিক সম্পর্ক। এছাড়াও রাজনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা-সব খাতেই ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক এই জায়গাতেও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িয়ে আছি। এর ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন সহযোগিতা (ওডিএ) আসছে, এর বড় একটা অংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় একক বাজারও যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক সেখানে রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি আসে দেশটি থেকে। হুমায়ূন কবির আরও বলেন, বাংলাদেশের এ মুহূর্তে অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা সংকট। এখানে আমরা আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যেভাবে দেনদরবার করছি, সেখানে দুটি দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বড় সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিবছর ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি অনুদান আসে, এর সবচেয়ে অংশ অবদান তাদের। এছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা হয়েছে, এর সবচেয়ে বলিষ্ঠ সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। তার মতে, করোনার সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন এসেছে। অন্যদিকে বহুপাক্ষিক দিক মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যে কাজ করছে, সেখানে তাদের সহযোগিতা রয়েছে। এক্ষেত্রে দুইভাবে সহায়তা করছে। প্রথমত প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয় অপারেশনের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহে। এছাড়াও শান্তি রক্ষা মিশনে তারা সবচেয়ে বেশি অনুদান দেয়। মোট অনুদানের ২৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে। এসব বিবেচনায় নিয়ে নতুন নীতি আমলে নিলে এক কথা আর নিলে এসব বিষয়ে ঝুঁকি নিতে হবে। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, এই ঘোষণা বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে কিনা, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর। তবে কোনো কারণে আমদানি ও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিশাল বাণিজ্যিক অংশীদার। একক দেশ হিসাবে ওখানে আমাদের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় বাজার। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) আসার ক্ষেত্রেও দেশটি প্রথম সারিতে রয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হয়, এমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না, এটি অর্থনৈতিকভাবে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য। বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু না কিনলে, তারাও আমাদের পণ্য কিনবে না। এতে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেই। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসানীতির বিষয়ে ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। অ্যান্টনি ব্লিংকেন প্রথমে টুইট করে, এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তাদের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ করে। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সংবাদ সম্মেলনেও নতুন ভিসানীতির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ম্যাথু মিলার বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে মূলত এই বার্তা দিতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। এক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ নেওয়ার সামর্থ্য ও প্রস্তুতি রয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।