মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌরুটে যানবাহন স্বল্পতায় তিন ফেরির অলস সময় পার।

প্রকাশিতঃ জুন ২, ২০২৩ | ১২:৪০ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

গজারিয়া উপজেলার সাথে মুন্সীগঞ্জ সদরের দ্রুত যোগাযোগ ও দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গত ৯ নভেম্বর পুনরায় চালু করা হয় তিনটি ফেরি। তবে যানবাহন স্বল্পতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অলস অবস্থায় সময় পার করছে ঘাটে থাকা ফেরিগুলা সরেজমিনে গজারিয়া- মুন্সীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফেরি স্বর্ণচাপা, সন্ধ্যামালতী আর কর্ণফুলি ঘাটে নোঙ্গর করা অবস্থায় রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ (চর কিশোরগঞ্জ) ঘাটে যানবাহন স্বল্পতার কারণে এই নৌরুটে তিনটি ফেরিই অলস সময় পার করছে এমনটাই জানায় ঘাট থাকা নানা শ্রেণিপেশার লোকজন।ফেরি চালক মাস্টার শাহিন জানান, মাঝেমধ্যে সারাদিনে ১/২ বার এপার ওপার ট্রিপ দিয়ে থাকি। সড়ক পথে যানবাহন চলাচল খুবই কম। যানবাহন যদি না আসে তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। মাঝেমধ্যে ভিআইপিদের পারাপার করেছি।স্থানীয় চালকদের অভিযোগ, আমরা এ রুটে প্রতিনিয়ত গাড়ি চালিয়ে থাকি। মুন্সীগঞ্জ থেকে গজারিয়া সরাসরি যাত্রীসহ গাড়ি পারাপারে দীর্ঘ সময় ফেরিতে বসে থাকতে হয়। তাছাড়া বেশি পরিমাণ যানবাহন না হলে ফেরিও ছেড়ে যায় না। তবে ভিআইপি কোন গাড়ি আসলে ফেরি চলাচল করে বলে অভিযোগ তাদের। ফেরির বিকল্প হিসেবে দীর্ঘদিন এই নৌ-রুটে ট্রলার চলাচল করে আসছে। যা এখনো চলমান আছে। প্রতিদিন প্রায় ২০টির মতো ট্রলার এখানে চলাচল করে থাকে। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন ট্রলার পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে আসছে।সরকারি হরগঙ্গা কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন জানান,আমরা ফেরি ছেড়ে যাওয়ার সঠিক সময় জানি না। কখন আসবে, আর কখন ছেড়ে যাবে তার জন্য তো আর বসে থাকলে হবে না। বাধ্য হয়ে আমরা ট্রলারে পারাপার হয়ে থাকি।কুমিল্লা থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসা রেদওয়ান (২৮) গজারিয়া ফেরিঘাটে ট্রলার থেকে তার মোটরসাইকেলসহ নামছেন। তিনি জানান, এখানে ফেরি চলাচল করে শুনেছি। তবে ঐপারে ফেরির জন্য অপেক্ষা করেছিলাম কখন ছেড়ে যাবে সেটা জানতাম না। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে ট্রলারে পার হচ্ছি। আর এক মোটরসাইকেল নিয়ে তো আর ফেরি নদী পাড়ি দিবেনা।গজারিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মধ্য দিয়ে মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌরুটে প্রথমবারের মত এই রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন। সেসময় চলাচল শুরু করে। তবে বেহাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও যানবাহন সংকটের কারণে পাঁচ মাস চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষে গত ১০ নভেম্বর অর্থাৎ চার বছর পর আবারো মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া ফেরি সার্ভিসটি চালু করা হয়। ২য়বার ফেরি সার্ভিসটি চালু করার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. মৃণাল কান্তি দাস। বর্তমানে যান চলাচল আশানুরূপ না হওয়ায় ফেরি সার্ভিসটি ব্যাহত হচ্ছে।এদিকে সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ বলছেন, দক্ষিণ বঙ্গগামী প্রতিটি যানবাহন যদি এই পথটি ব্যবহার করে রাজধানী ও অন্যান্য এলাকায় আসা-যাওয়া করে তাহলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারলেই গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ নৌরুটটি চালক ও যাত্রীদের কাছে গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ টার্মিনাল সুপার ভাইজার সত্যজিৎ গুহ জানান, এই রোডে গাড়ি চলাচল কম থাকায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গত দুইদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ও বুধবার কোন ফেরিই গাড়ি নিয়ে নদী পাড়ি দেয়নি। পুরোপুরি অলস অবস্থায় ঘাটে গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি বসেছিলো।এ বিষয়ে নৌ পরিবহন কর্পোরেশন ফেরি সার্ভিস ইউনিটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন জানান, আমরা পুনরায় ফেরি চালু করার সময় প্রচারণার স্বার্থে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। তাছাড়া বাস মালিকরা যদি তাদের বাস চলাচলে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে আমরাও তাদের সঠিক সময় জানিয়ে দিবো এবং পারাপার করবো। আর ভাড়ার বিষয়ে চালকরা দাবি জানালে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো।প্রসঙ্গত, ফেরি সার্ভিসটি সচল রাখতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৮০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উত্তর ইসলামপুর এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের চরকিশোরগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত এবং গজারিয়ার কাজিপুরা ফেরিঘাট থেকে রসুলপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত এবং রসুলপুর খেয়াঘাট থেকে ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১২ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে সরকার। সে অনুযায়ী এই সড়ক পথে যানবাহন চলাচল বাড়েনি যার কারণে ঘাটে থাকা ফেরিগুলো যানবাহন পাচ্ছে না।