টিপু হত্যার অভিযোগপত্রে আ.লীগ, যুবলীগ নেতাসহ আসামি ৩৩

প্রকাশিতঃ জুন ৫, ২০২৩ | ৬:৩২ অপরাহ্ন
অনলাইন নিউজ ডেক্স

সাড়ে ১৪ মাস পর মতিঝিলের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা কোনো দল দেখিনি। তদন্তে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাকেই অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। টিপু হত্যা মামলার তদন্তে ৩৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পায় ডিবি। তাদের মধ্যে এক্সএল সোহেল নামে সন্দেহভাজন একজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় তাকে অভিযোগপত্রে রাখা হয়নি। বাকি ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ৯ জন এখনো পলাতক। হারুন বলেন, সুমন শিকদার ওরফে মুসার পরিকল্পনায় ওই হত্যার ঘটনায় মাসুম মো. আকাশ (৩৪) (বগুড়া থেকে গ্রেফতার), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার), নাসিরউদ্দীন মানিকসহ কয়েকজন ছিলেন। তদন্তে হত্যার কারণ সম্পর্কে এক প্রশ্নে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি, এলাকায় আধিপত্য ও মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের কিছু বিষয় তদন্তে এসেছে। জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ছিলেন ঢাকার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন তিনি। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান রেস্তোরাঁর মালিক টিপু ঠিকাদারির কাজও করতেন। দুই মেয়ে, এক ছেলের বাবা টিপু থাকতেন শাহজাহানপুরে। ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাতে খিলগাঁও রেলগেটের কাছে আক্রান্ত হয় টিপুর গাড়ি। মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি যানজটে আটকেপড়া টিপুর গাড়ির কাছে এসে তাকে গুলি করে। সেই সময় গাড়ির পাশে রিকশার আরোহী কলেজছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নিলে দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। হত্যাকাণ্ডের পর টিপুর স্ত্রী স্থানীয় নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি যে মামলা করেছেন, তাতে আসামির তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা ছিল না। পরে ওই বছর ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ব্যক্তিই টিপুকে গুলি করেছিলেন। পরে আরফান উল্লাহ দামাল নামে আরও একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয় কমলাপুর থেকে। এরপর ২ এপ্রিল সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে গ্রেফতার করার কথা জানায় র‌্যাব। র‌্যাব সেই সময় বলেছিল— চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার বদলা এবং বোঁচা বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওমর ফারুকসহ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। বাজেট ছিল ১৫ লাখ টাকা। পরে এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন শিকদার মুসাকে ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগেই মুসা দুবাই চলে গিয়েছিলেন। হত্যা পরিকল্পনা এবং যাবতীয় নির্দেশনা সেখান থেকেই দেওয়া হয় বলে সে সময় তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, মুসা ‘রাজনীতি ও অপরাধ জগতের মধ্যে যোগসূত্র’ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢাকা ও দুবাইয়ের অপরাধ জগতের মধ্যেও সংযোগের সমন্বয় করতেন তিনি। টিপু হত্যা মামলা অভিযোগপত্রে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ মনসুর, যুবলীগ নেতা মারুফ রেজা সাগর (গ্রেফতার), ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার রানার (গ্রেফতার) নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।